বকচর গণহত্যা (যশোর সদর)
বকচর গণহত্যা (যশোর সদর) সংঘটিত হয় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে। কমপক্ষে ১০০ জন গ্রামবাসী এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
বকচর যশোর সদর উপজেলার ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত একটি এলাকা। এখানকার জনগণ নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদন নিয়ে ব্যস্ত থাকত। তাদের বিরুদ্ধে পাকবাহিনীর অভিযোগ ছিল তারা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল। শুধু এ কারণেই এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে শান্তিপ্রিয় এই জনপদে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা চালায়। তাদের সহযোগিতা করে স্থানীয় বিহারিরা।
ঘটনার দিন সকালে শহিদ বিহারি, মাহবুব খা বিহারি ও হবি বিহারির সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী গুলি ছুড়তে-ছুড়তে বকচরে প্রবেশ করে। এরপর শুরু করে গণহত্যা। তারা যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই হত্যা করেছে। এতে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পুলিশ ও ইপিআর সদস্য এবং দূর-দূরান্ত থেকে এসে আশ্রয় নেয়া লোকজনও নিহত হয়। হানাদাররা এদিন কমপক্ষে ১০০ জন লোককে হত্যা করে। শুধু বকচর বড়োবাড়িরই ২৭ জনকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন প্রভাস, শ্রীবাস, প্রশান্ত, দীপক, কৃষ্ণপদ, বলাই, মধু, গোবিন্দ, কালীপদ বাসুদেব, কালীচরণ, মাধব, পরিতোষ, কানাই লাল ও শংকর চন্দ্র। গণহত্যার পর পাকসেনা ও বিহারিরা স্থানীয় নটবর বাবুর বাঁশবাগানের ভেতর বিশাল এক গর্ত খুঁড়ে লাশগুলো মাটিচাপা দেয়। ঘটনাস্থলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। আজো বিভিন্ন স্থানের মানুষ বকচর গণকবর দেখার জন্য ছুটে আসে, ছুটে আসে নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরাও। [মহসিন হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড