বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ
ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ (১৯০৫-১৯৭৭) ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। তিনি ১৯০৫ সালের ১৩ই মে অবিভক্ত ভারতের পুরান দিল্লির হাউস কাজি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উত্তর প্রদেশের গন্ডা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং দিল্লি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস্ কলেজে কিছুদিন অধ্যয়নের পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯২৩ সালে যুক্তরাজ্যে গমন করেন এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সেইন্ট ক্যাথরিন্স কলেজে অধ্যয়ন করেন। দেশে ফিরে ১৯২৮ সালে তিনি লাহোর উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নকালে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নেহেরুর প্রগতিশীল ধ্যানধারণায় প্রভাবিত হয়ে তিনি ১৯৩১ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি আন্দোলনেই তিনি অংশগ্রহণ করেন।
ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ ১৯৫২-৫৩ সালে রাজ্যসভার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি আসাম রাজ্য সরকারের এডভোকেট জেনারেল নিযুক্ত হন। তিনি দুবার আসামের বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে আসামের বরপেটা নির্বাচনি এলাকা থেকে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে খাদ্য ও কৃষি, শিক্ষা, শিল্প উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান আইন সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে তিনি ১৯৭৪-৭৭ এ সময়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। বহির্বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে পাকিস্তানের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন করতে সক্ষম হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ-কে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড