You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.04 | পূর্ব বাখাই গণহত্যা (ফুলপুর, ময়মনসিংহ) - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ব বাখাই গণহত্যা (ফুলপুর, ময়মনসিংহ)

পূর্ব বাখাই গণহত্যা (ফুলপুর, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ৪ঠা আগস্ট। পাকসেনা ও রাজাকাররা এদিন ৯ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। পূর্ব ও পশ্চিম বাখাই হিন্দু প্রধান গ্রাম। হিন্দুদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তাদের সম্পত্তি দখলে নেয়া এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ভয় দেখানোর লক্ষ্যে এ গণহত্যা চালানো হয়।
ঘটনার দিন স্থানীয় রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির সদস্যদের নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী পূর্ব বাখাই ও পশ্চিম বাখাই গ্রাম ঘেরাও করে। ফুলপুর থানা শান্তি কমিটির সভাপতি রজব আলী ফকির, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল খান, আলবদর কমান্ডার এ কে এম রফিকুল হুদা ওরফে মনু মিয়া, মনু মিয়ার সহোদর এ কে এম শামছুল হুদা ওরফে সুরুজ মিয়া, বিহারি ইদ মাসুদ, আবুল রশিদ, আব্দুল আজিজ, বসির মেকার, আবু বক্কর, আলবদর কমান্ডার হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ মাস্টার, আবু সিদ্দিক, আব্দুল মোতালেব (কাকনী), আফরোজ ও আব্দুল মোতালেব (আমুয়াকান্দা) এবং পাকসেনাদের প্রায় ৮০ জনের একটি দল এ গণহত্যায় অংশ নেয়। তারা রাত ৮ থেকে ১১টা পর্যন্ত দুই গ্রামে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। এখান থেকে ১৩ জনকে আটক করে পূর্ব বাখাই গ্রামের ডাক্তার নরেন্দ্র কুমার দাসের বাড়িতে জড়ো করে। ১৩ জনই হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষ ছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা আটককৃতদের আমগাছে ঝুলিয়ে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। রাত ১২টার দিকে কংস নদীর সরচাপুর গোদারাঘাটে ১৩ জনকে দাঁড় করে গুলি করে। এতে ৯ জন শহীদ হন এবং ৪ জন মারাত্মক আহত অবস্থায় পানিতে ডুব দিয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। এখানে নিহত ব্যক্তিরা হলেন— যুগেশ চন্দ্র দাস (পূর্ব বাখাই), নিগেন্দ্র চন্দ্র দাস (পশ্চিম বাখাই), নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস (পশ্চিম বাখাই), রমণী মোহন ভদ্র (পূর্ব বাখাই), অবিনাশ চন্দ্র (পূর্ব বাখাই), ডা. নরেশ চন্দ্র দাস (পূর্ব বাখাই), উপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার (পূর্ব বাখাই), ধীরেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার (পূর্ব বাখাই) ও নিগেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস (পূর্ব বাখাই)। আহতরা হলেন- বিমল চন্দ্র বিশ্বাস, সুনিল চন্দ্র, ব্রজেন্দ্র চন্দ্র দাস ও পৃথ্বীশ চন্দ্র দাস।
এ গণহত্যার ১৩-১৪ দিন পূর্বে নিগেন্দ্র চন্দ্র দাস (গণহত্যায় নিহত)-এর স্ত্রী সুবরালী সিং হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের হাতে সম্ভ্রম হারান। নিগেন্দ্র চন্দ্র দাস শহীদ হলে তাঁর স্ত্রী ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁর ২ ছেলে মারা যায়। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড