পুরাতন বাজার গণহত্যা (পার্বতীপুর, দিনাজপুর)
পুরাতন বাজার গণহত্যা (পার্বতীপুর, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ২৯শে মার্চ। এতে ১৪ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়।
পার্বতীপুর থানা মোড় থেকে পার্বতীপুর রেল স্টেশনের দিকের রাস্তার দু-পাশের এলাকা পুরাতন বাজার নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরাতন বাজারসহ রেলের শহর পার্বতীপুর বিহারি অধ্যুষিত ছিল। এখানকার বিহারিরা ছিল হিংস্র এবং চরম বাঙালি বিদ্বেষী। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব থেকেই তারা বাঙালিদের বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতায় যুক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় তারা সহস্রাধিক বাঙালিকে হত্যা করে। ২৯শে মার্চ তারা পুরাতন বাজারে গণহত্যা চালায়। এ গণহত্যায় পুরাতন বাজারের উপেন্দ্র নাথ শীল, তার পুত্র সুভাস চন্দ্র শীল, উপেন্দ্র নাথের ভাই হরিপদ শীল ও ললিত চন্দ্র শীল, প্রতিবেশী রাজকুমার মেহতার পিতা, ৪ ভাই ও ৩ বোন, মামী এবং বাড়িতে আসা আত্মীয়সহ ১৪ জনকে এক সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে লাশ একটি পরিত্যক্ত কুয়ায় ফেলে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে পুরাতন বাজারে শতশত বাঙালি গণহত্যার শিকার হলেও তাদের নাম পরিচয় জানা যায় না। কারণ তাদের অধিকাংশই ছিল রেলওয়ের কর্মী, চাকরির সুবাদে এখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছিল। পুরাতন বাজার গণহত্যায় শহীদ কয়েকজন হলেন- পার্বতীপুর পুরাতন বাজারের আব্বাসপাড়ার জ্যোতিন্দ্রনাথ দাস (৮৬) (পিতা বসন্ত দাস), যোগেন্দ্রনাথ রায় (৬৫) (পিতা জ্যোতিন্দ্রনাথ দাস), মনোরঞ্জন দাস (৫৩) (শ্বশুর জ্যোতিন্দ্রনাথ দাস), ঊষারানী দাস (৪৪) (স্বামী মনোরঞ্জন দাস), রমানাথ দাস (৬১) (পিতা জ্যোতিন্দ্রনাথ দাস), রববির গোয়ালা, জয়নব বিবি (২৩) (স্বামী মুটু মোল্লা), আকরাম হোসেন (৬) (পিতা মুটু মোল্লা), সোনা মিয়া (মুটু মোল্লার ছোট ভাই), জসিমউদ্দিন সরকার (৭০), মো. লস্কর আলী, উপেন্দ্র নাথ শীল, সুভাস চন্দ্র শীল (পিতা উপেন্দ্র নাথ শীল), হরিপদ শীল ও ললিত চন্দ্র শীল। ৬ বছরের আকরামকে হত্যা করা হয় রেললাইনের ওপর আছাড় মেরে। আছাড় খেয়ে তার মাথার ঘিলু বের হয়ে যায়। ৮৫ বছরের জ্যোতিন্দ্রকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জয়নাব বিবিকে কেটে টুকরো-টুকরো করে রেল ইঞ্জিনের জ্বলন্ত বয়লারে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এরূপ বর্বরোচিত ও নিষ্ঠুর পন্থায় হত্যার শিকার হন শহীদদের প্রায় সকলেই। পুরাতন বাজার এলাকায় শহীদদের বাঁধাই করা একটি গণকবর রয়েছে। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড