মুক্তিযুদ্ধে পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর)
পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর) পীরগঞ্জ উপজেলা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উত্তর জনপদের একটি সংযোগ পয়েন্ট হিসেবে খ্যাত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে পীরগঞ্জের মুক্তিকামী বীর জনতার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। ৬৬-র ৬-দফা আন্দোলন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১-দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান- এবং ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর বিজয় পূর্ব বাংলার আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবিকে জোরদার করে। ৭০-এর নির্বাচন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আগমন ও অত্র এলাকার কৃতী সন্তান ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার নির্বাচনী গণসংযোগ পীরগঞ্জের মানুষকে আরো উৎসাহিত করে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিউর রহমান-কে এমএনএ নির্বাচিত করে। নির্বাচনকালে সবার মাঝে ধারণা জন্মেছিল বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র, কূটচাল, জাতীয় পরিষদের সভা আহ্বান ও পরে স্থগিত ঘোষণা পীরগঞ্জের মানুষকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিবাদী করে তোলে। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর পীরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ হয়। পীরগঞ্জ-মিঠাপুকুর আসন থেকে নির্বাচিত মতিউর রহমান এমএনএ ও কমিউনিস্ট নেতা শংকর বসু মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতিপর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মতিউর রহমান এমএনএ ও গাজী রহমানের নির্দেশে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুস সোবহান বাদশার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচি মোতাবেক পীরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠিত হয়। ডা. ইদ্রিস আলীর বাসা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সকল কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো। পীরগঞ্জ হাইস্কুল মাঠ ও বড়বিলায় বাঁশের লাঠি ও হাতে তৈরি কাঠের রাইফেল দিয়ে ‘জয় বাংলা’ লেখা লাল ফিতা মাথায় বেঁধে ১০০ জন ছাত্র-যুবকের একটি গ্রুপ প্রাথমিক প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। প্রশিক্ষক ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংক পীরগঞ্জ শাখার গার্ড বাচ্চু। কাজী আব্দুল হালিম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পীরগঞ্জ থানার দারোগা আবুল কাসেম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বড়বিলার ধারে ছাত্র-যুবকদের গোপনে রাইফেল দিয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি আসামি ধরার অজুহাতে গ্রামে-গ্রামে মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বন্ধের প্রতিবাদে ২রা মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে পীরগঞ্জে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। পীরগঞ্জ, লালদিঘী, বালুয়াহাট, চতরাহাট, খালাশপীর, ভেণ্ডাবাড়ী ও মাদারগঞ্জ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে পীরগঞ্জ বন্দরের জসিজল হক মোড়ে (আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে) এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন গাজী রহমান, কাজী আব্দুল হালিম, আব্দুস সোবাহান বাদশা প্রমুখ নেতা।
১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠেয় অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে পীরগঞ্জে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এদিন দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, সরকারি- বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকে। ছাত্রলীগ নেতা আব্দুস সোবাহান বাদশার নেতৃত্বে বিশাল মিছিল শেষে কাছিমন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রংপুরে গুলি ও প্রাণহানির খবর পীরগঞ্জে পৌঁছলে এখানকার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কারমাইকেল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল মমিন আকন্দ পীরগঞ্জের গ্রামে-গ্রামে গিয়ে মানুষজনকে প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। রংপুরের ন্যায় পীরগঞ্জেও চলতে থাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। এদিকে পাকবাহিনীর সামরিক কনভয় পীরগঞ্জে ঘন-ঘন টহল দিতে থাকে।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৪, ৫ ও ৬ই মার্চ পীরগঞ্জ উত্তাল হয়ে ওঠে। সবার মাঝে উৎকণ্ঠা। আন্দোলন নিয়ে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কৌশলগত দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে স্বাধীনতা ও মুক্তির চূড়ান্ত আহ্বান জানালে পীরগঞ্জের সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সুধীজন পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে ডা. ইদ্রীস আলীর বাসায় বৈঠকে মিলিত হয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের মধ্যে কাজী আব্দুল হালিম, গাজী রহমান, আব্দুস সোবাহান বাদশা, রেজা শাহ, তৌফিকুর রহমান, গিয়াস উদ্দীন, জসিজল হক, মোখলেসুর রহমান, আব্দুস সালেক, আজিজার রহমান, মফিজ উদ্দিন, আলিম উদ্দীন, আবেদ আলী, নুরুল হক সানু, রমজান আলী তালুকদার, আবুল কাশেম মিয়া, আবু আলম প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। কমিনিউস্ট নেতা মণিকৃষ্ণ সেন সংগ্রাম পরিষদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১২ই মার্চ আওয়ামী লীগের ডাকে লাঠি মিছিল শেষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে বিভিন্ন অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ঐদিন সর্বদলীয় সংগ্ৰাম পরিষদের পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশ দিবস’ পালন করা হয়।
রংপুর ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৩তম ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্স। এই ব্রিগেডের অধীনে ৩য় বেঙ্গল এবং ২৬তম এফএফ রেজিমেন্ট ছিল। সৈয়দপুরে ২৩তম ক্যাভেলরি ও তার সহযোগী বাহিনী এবং রংপুর হেডকোয়ার্টার্সে ২৯তম ট্যাঙ্ক বাহিনী অবস্থান করছিল। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ২৪শে মার্চ বিক্ষুব্ধ জনতার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রংপুর সেনানিবাসের পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা লে. আব্বাসের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী এবং অবাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয় (দেখুন রংপুর সদর উপজেলা)।
২৫শে মার্চ বিকেল ৩টায় রংপুর সেনানিবাসে লে. আব্বাসের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক হেলিকপ্টারযোগে জেনারেল জানজুয়া, জেনারেল মিঠঠা ও জেনারেল নজর হোসেনসহ কয়েকজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জানাজায় যোগ দিতে আসেন। তারা ব্রিগেডিয়ার মালিকের বাসায় মিটিং করে জানাজায় শরিক না হয়েই ঢাকায় ফিরে যান। রংপুরে ১৪৪ ধারা জারি করে রাত ১২টার পর বাঙলি ইপিআর এবং নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলে অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। ঢাকাসহ সারা দেশে গণহত্যা এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের খবর বিবিসি ও আকাশবাণীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পীরগঞ্জের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সকলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশ নেয়। রাস্তা খুঁড়ে ও গাছ ফেলে পাকবাহিনীর গাড়ি বহরে বাধার সৃষ্টি করে। বড় দরগা, লালদিঘী, খেদমতপুর ও পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এলাকাবাসীকে নিয়ে প্রতিরোধব্যূহ রচনা করে এবং চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৮শে মার্চ সাধারণ মানুষজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করলে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে অনেক মানুষ শহীদ হন। পীরগঞ্জে চৈত্রকোল, দানেশ নগর ও চককৃষ্ণপুর এলাকার আদিবাসী জয় নারায়ণ মণ্ডল, ভোলা মার্ডি, কমল মণ্ডল, চুলু মণ্ডল প্রমুখের নেতৃত্বে আদিবাসীরা ক্যান্টনমন্ট আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন।
৯ই এপ্রিল কাজী আব্দুল হালিম ও আব্দুস সোবাহান বাদশার নেতৃত্বে পীরগঞ্জ থানা থেকে অস্ত্র লুট করা হয়। থানার দারোগা আবুল কাসেম মিয়া ও সেকেন্ড অফিসার বেলায়েত হোসেন এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। ১৬ই এপ্রিল ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ ৬নং সেক্টরে দায়িত্ব নেয়ার পর সেনা, নৌ, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর অনেক সদস্য পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগ করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেন। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিদ্রোহ করে আসা বাঙালি ইপিআর সুবেদার আলতাফ হোসেন গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ী হয়ে পীরগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করেন। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জ আংড়ার ব্রিজের দুই পাশে গর্ত করে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পাকবাহিনীর ১৬তম ডিভিশনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি ছিল। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকবাহিনীর গাড়িবহর আসার সঙ্গে-সঙ্গে আলতাফ বাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এতে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হলে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরদিন পাকবাহিনী প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সাঁজোয়া যান নিয়ে আংড়ার ব্রিজে আক্রমণ চালিয়ে সহজেই প্রতিরোধব্যূহ ভেঙ্গে মাদারগঞ্জ প্রবেশ করলে আলতাফ বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনীর গুলিতে শিরিস চন্দ্র সাহা ও রওশনপুরের আব্দুল হাকিম উদ্দিন শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনী মাদারগঞ্জ বন্দরে অগ্নিসংযোগ করে।
মার্চ মাস থেকেই পীরগঞ্জে পাকবাহিনীর আসা-যাওয়া ছিল। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট কাছে হওয়ায় তারা অনেকদিন ধরে এখানে স্থায়ী ক্যাম্প না করে রংপুর থেকে অপারেশন চালাত। যুদ্ধের শেষের দিকে অর্থাৎ ৩রা ডিসেম্বর পাকবাহিনী পীরগঞ্জ থানা, পচাকান্দর, সোনাকান্দর, ধনাশলা, হাইস্কুল ও বড়দরগাতে ক্যাম্প স্থাপন করে।
পীরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই শান্তি কমিটি – ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। শান্তি কমিটির দালাল ও রাজাকারদের মধ্যে জামাল হোসেন (রসুলপুর), নজরুল ইসলাম (ভরাদোহার), আব্দুল গফুর (ভেন্ডাবাড়ি), আব্দুল গাফফার (ভেন্ডাবাড়ি), খুররম আলী সরকার (পিতা খজির উদ্দিন সরকার, আমবাড়ী; রাজাকার কমান্ডার), তোজাম্মেল হোসেন (কোলাবাড়ী), মো. হানিফ (সানেরহাট), মো. হোসেন (সানেরহাট), নজরুল ইসলাম (সানেরহাট), ১৯৭২ সালে যাদের নামে স্পেশাল ট্রাইবুনালে মামলা হয়েছিল তাদের মধ্যে আবুল হোসেন (পিতা জিন্দা খান, জামালপুর), ইউনুস আলী (পিতা ইসাহাক আলী, হজরতপুর), আব্দুল হান্নান রওফে বুলু (পিতা নিজাম উদ্দিন, হজরতপুর), আব্দুল রেজ্জাক (পিতা রকিব উদ্দিন, হজরতপুর), মাহফুজুর রহমান (নিশ্চিন্তপুর), জয়নাল আবেদিন (নিশ্চিন্তপুর), লোকমান আলী (নিশ্চিন্তপুর), কফিল হামি (নিশ্চিন্তপুর), আহমেদ আলী (নিশ্চিন্তপুর), তোফাজ্জল হোসেন (নিশ্চিন্তপুর), মোজাই দফাদার (কুখ্যাত রাজাকার, নিশ্চিন্তপুর)-এর নাম উল্লেখযোগ্য।
৩রা মার্চের পর থেকে পীরগঞ্জে অনেক নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ পাকবাহিনীর বর্বর নির্যাতনে হতাহত হয়। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নিষ্ঠুরতার আগুনে বড় দরগাহ, মাদারগঞ্জ, উজিরপুর, মাদারপুর ও শোলাগাড়ীসহ বিভিন্ন গ্রাম ভস্মীভূত হয়। ইপিআর সদস্য সুবেদার আলতাফ আলীর নেতৃত্বে ১৬ই এপ্রিল আংড়ার ব্রিজ যুদ্ধ – পরিচালিত হয়। মাদারগঞ্জে ১৭ই এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা মাদারগঞ্জ যুদ্ধ নামে পরিচিত পীরগঞ্জে পাকবাহিনীর ক্যাম্পগুলো নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পীরগঞ্জের লালদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি গণকবর রয়েছে, যা লালদিঘী বড়দরগা গণকবর নামে পরিচিত। এখানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অনেক শহীদের কবর রয়েছে।
১৪ই অক্টোবর আজাহার আলীর নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা পীরগঞ্জে আসেন এবং নদীর ওপারে বিহারি কলোনিতে অপারেশন চালান। ফজলার রহমানের নেতৃত্বে ত্রিমোহনী ব্রিজে রাজাকারদের সঙ্গে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে তিনজন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আটক হয়, ত্রিমোহনী বিজ্ৰ যুদ্ধ নামে পরিচিত।
৩রা ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী-র সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা পীরগঞ্জে প্রবেশ করেন এবং লালদিঘীতে অবস্থানরত পাকিস্তানি ডিফেন্সের ওপর কামান আক্রমণ শুরু করলে সেখানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়, যা লালদিঘী যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ-যুদ্ধে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে না পেরে পাকবাহিনী পিছু হটে। পরবর্তীতে ৮ ও ৯ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী পীরগঞ্জ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। মিত্রবাহিনীর গোলার আঘাতে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩২ বালুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল সুলতান নিহত হলে পাকবাহিনী পিছু হটে। ৭ই ডিসেম্বর পীরগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়।
পীরগঞ্জে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা গেছে। তিনি হলেন জালাল উদ্দিন (পিতা হেসাব উদ্দিন, কাসিমপুর)। [লুৎফর রহমান সাজু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড