পানকাতা দ্বিতীয় যুদ্ধ (ধনবাড়ি, টাঙ্গাইল)
পানকাতা দ্বিতীয় যুদ্ধ (ধনবাড়ি, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ২৫শে সেপ্টেম্বর। এ-যুদ্ধে কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন এবং যুদ্ধের পর হানাদারদের হাতে ১৯ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
পানকাতা টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার একটি গ্রাম। ধনবাড়ি সদর থেকে প্রায় ৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে গোপালপুর সড়কের পাশে এর অবস্থান। ৭ই মার্চের পর এখানে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মুক্ত এলাকা হিসেবে মুক্তিবাহিনী এখান থেকে বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর মোকাবেলা করে।
ঘটনার দিন মুক্তিযোদ্ধারা পানকাতা হাইস্কুলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। পাকবাহিনীর অবস্থান ছিল গোপালপুর থানা সদরে। তারা রাজাকারদের মাধ্যমে পানকাতায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর জানতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বারবার আক্রান্ত ও পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে পাকবাহিনী পানকাতা আক্রমণের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এ উপলক্ষে পাকবাহিনীর একটি কোম্পানি আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাজাকারদের সহায়তায় পানকাতা হাইস্কুলের দিকে অগ্রসর হয়। তারা গুলিবর্ষণ ও রাস্তার দুপাশের বাড়িঘর পোড়াতে-পোড়াতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিবাহিনীও তাদের মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এ উদ্দেশ্যে কোম্পানি কমান্ডার কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গালের নেতৃত্বে ১০৫ জন মুক্তিযোদ্ধা দুভাগে বিভক্ত হন। একটি দল পানকাতা থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে ধনবাড়ি-ঝাওয়াইল-হাদিরা ত্রিমুখী রাস্তার পাশে অবস্থান নেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা খসরু আনোয়ারের নেতৃত্বে অন্যরা সুবিধামতো স্থানে পজিশন নিয়ে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণের অপেক্ষা করতে থাকেন। পাকবাহিনী শিমলা হয়ে মাহমুদপুর গ্রামে এসে হাতেম আলী তালুকদার এমএনএ-র বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। অতঃপর তারা ঘরবাড়ি পোড়াতে-পোড়াতে পানকাতা হাইস্কুলের দিকে অগ্রসর হয়। পাকবাহিনীর গুলির শব্দ শুনে এবং আগুনের লেলিহান শিখা দেখেও মুক্তিযোদ্ধারা শান্ত হয়ে শত্রুর অপেক্ষা করতে থাকেন। তারপর পাকবাহিনী আয়ত্তের মধ্যে আসামাত্র তাঁরা গুলি চালান। পাকবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে এ-যুদ্ধ প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। পরে কৌশলগত কারণে মুক্তিবাহিনী পশ্চাদপসরণ করে। পাকবাহিনীর অধিনায়ক এক মেজর এতে আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা চলে যাওয়ার পর পাকবাহিনী রাজাকার ও আলবদরদের সঙ্গে নিয়ে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। তারা পানকাতা গ্রামের কাজিম উদ্দীন, আলাউদ্দীন, আব্দুল গনি, সিরাজ আলী, রুস্তম আলীসহ অনেকের বাড়িঘরে ব্যাপক লুটপাট শেষে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া তারা পানকাতা হাইস্কুল মাঠে ৫ জন এবং পানকাতা ঈদগাহ মাঠে ১৪ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। শহীদদের ৩ জনকে পানকাতা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পানকাতার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী রাইফেল, এলএমজি, এসএলআর, হ্যান্ড গ্রেনেড ও ২ ইঞ্চি মর্টার ব্যবহার করে। অন্যদিকে পাকবাহিনী এর চেয়েও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। এ-যুদ্ধে মধুপুর, ধনবাড়ি, গোপালপুর ও সরিষাবাড়ি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন। [মো. গোলাম ছামদানী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড