You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.24 | পাতারচর গণহত্যা (মুলাদী, বরিশাল) - সংগ্রামের নোটবুক

পাতারচর গণহত্যা (মুলাদী, বরিশাল)

পাতারচর গণহত্যা (মুলাদী, বরিশাল) সংঘটিত হয় ২৪শে জুলাই। এ গণহত্যায় ৩২ জন মানুষ শহীদ হন। মুলাদী উপজেলা সদর থেকে ২ কি মি দক্ষিণ পূর্ব দিকে আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী গ্রাম পাতারচরে খ্রিস্টান পাড়ার অবস্থান। ২৪শে জুলাই সকালবেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দুটি গানবোটে করে বরিশাল থেকে এসে আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল পাতারচর এলাকায় অভিযান চালায়। পাতারচরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছে স্থানীয় দোসরদের এমন ইন্ধন এবং তাদের দেখানো পথে পাকিস্তানি বাহিনী পাতারচর প্রবেশ করে। তারা পাতারচর, তেরচর, মহিষগুদী গ্রাম এবং স্থানীয় খ্রিস্টান পাড়ায় আক্রমণ করে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যা চালায়। এ সময় তারা খ্রিস্টান পাড়ার কয়েকটি সহ অনেকগুলো বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে আক্রমণের এক পর্যায়ে হানাদাররা মহিষগুদী চ্যাচরা খালের দক্ষিণ পাশে রমেশ ডাক্তার-এর বাড়ির নিকট হাসু খা’র বাড়ি, মীরা বাড়ি, ফকির বাড়ি, তেরচর সরদার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা কয়েকজন গ্রামবাসীকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সিরাজ মীর। শহীদদের লাশগুলো নদীর পাড়ে ফেলে রাখলে জোয়ারের পানিতে নদীতে ভেসে যায়। এই গণহত্যায় খ্রিস্টান পাড়ার পিতা-পুত্র, দুই পরিবারের ৪ সহোদরসহ ৩২ জন মানুষ শহীদ হন। তাঁরা হলেন- পাতারচর গ্রামের হাসেম আলী খান (৬৫) (পিতা কালাই খান), মো. তোফায়েল ফকির (৭০) (পিতা আবদুল ফকির), ইসহাক ফকির (৬০) (পিতা তোফায়েল ফকির), বশির উদ্দীন ফকির (৪০) (পিতা ফজলে আলী ফকির), ইউসুফ আলী ফকির (৪৫) (পিতা ছবদের ফকির), আবদুল জব্বার সরদার (৩৫) (পিতা করিম উদ্দীন সরদার), হাশেম আলী ফকির (৬০) (পিতা ফজলে আলী ফকির), হোসেন বেপারী (৪৫) (পিতা ওহাব বেপারী), আয়নাল মীর (৬০) (পিতা আর্শেদ আলী মীর), আলমগীর হোসেন সরদার (পিতা কালু সরদার), আবদুর রশিদ কবিরাজ (৬০) (পিতা জমির আলী কবিরাজ, গাছুয়া), খ্রিস্টান পাড়ার যোগেশ চন্দ্র গাইন (৭০) (পিতা নবীন চন্দ্র গাইন), নরেশ চন্দ্র গাইন (৬৫) (পিতা নবীন চন্দ্ৰ গাইন), জুনাস চন্দ্র গাইন (৬০) (পিতা নবীন চন্দ্ৰ গাইন), বীরেন চন্দ্র গাইন (৪৫) (যোগেশ চন্দ্র গাইন), প্রিয়নাথ গাইন (৫০) (পিতা বেনী মাধব গাইন), উপেন্দ্র নাথ গাইন(৪৫) (পিতা বেনী মাধব গাইন), তেরচর গ্রামের আহমেদ হাওলাদার (৪০) (পিতা মফিজ উদ্দিন হাওলাদার), মোহন হাওলাদার (৪০) (পিতা ইয়াসিন হাওলাদার), মজিদ সরদার (৪০) (পিতা আরশেদ আলী সরদার), ফালান মোল্লা (পিতা সফিজ উদ্দিন মোল্লা), কালু মোল্লা (৩৫) (পিতা জোবান আলী মৃধা), কাদের মৃধা, মহিষগুদী গ্রামের রশিদ হাওলাদার (৪০) (পিতা কুদ্দুস হাওলাদার), মোহাম্মাদ আলী মীর (৩৫) (পিতা দলিল উদ্দীন মীর), মোবারক আলী মুন্সী (৪৫) (পিতা নাসির মুন্সি), মোশারফ হোসেন মুন্সী (২৫) (পিতা ইসাব আলী মুন্সি), আবুল বাশার মুন্সি (১৮) (পিতা ইসাব আলী মুন্সি), রাধিকা মোহন দাস (৪০), মেম্বর বেপারী (৭০) (পিতা আবদুল বেপারী), বেগম বিবি (৪০) (স্বামী কালু মীর) ও আমান উল্লাহ (৫০) (চট্টগ্রাম)। পাতারচর গণহত্যায় পাতারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদদের একটি নামফলক স্থাপন এবং তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে অপর একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড