You dont have javascript enabled! Please enable it! পাগলা দেওয়ান পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ (জয়পুরহাট সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

পাগলা দেওয়ান পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ (জয়পুরহাট সদর)

পাগলা দেওয়ান পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ (জয়পুরহাট সদর) পরিচালিত হয় কয়েকবার। এ সকল আক্রমণে ৫৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং তাদের অনেকগুলো অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
পাগলা দেওয়ান স্থানটি জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের অন্তর্গত। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৮ই জুন থেকে ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে গণহত্যা চলে। পাগলা দেওয়ান সীমান্ত শরণার্থী পারাপারের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। মূলত বাংলাদেশের মানুষ যেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভারতে যেতে না পারে এ উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পাগলা দেওয়ানে গণহত্যা শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে গণহত্যা ও নির্যাতন চালাতে থাকে। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদেরও অন্যতম লক্ষ্য ছিল হানাদার বাহিনীর এ ক্যাম্প আক্রমণ করা। ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাগলা দেওয়ান হানাদার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকবার আক্রমণ করেন। কমান্ডার আবুল হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল আগস্ট মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে দুবার আক্রমণ চালান। আবুল হোসেন ছিলেন ভারতের কামারপাড়া ক্যাম্পে, যার ইনচার্জ ছিলেন রায় সিং দোগরা। রায়সিং দোগরা আবুল হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটিকে পাগলা দেওয়ান পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণের জন্য প্রেরণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি হিলি সীমান্তে এসে পাগলা দেওয়ান মাজারের উল্টো দিকে ঝিলের পাড়ে ভারতীয় সীমান্তে অবস্থান নেন। সেখান থেকে পাগলা দেওয়ান ক্যাম্প দেখা যায়। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্যকে বাঙ্কারের বাইরে দেখতে পেয়ে এসএলআর ও এলএমজি থেকে ফায়ার করেন। এ-সময় সঙ্গে থাকা দুই ইঞ্চি মর্টার দিয়ে তাঁরা শেলিং করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ছিল গেরিলা পদ্ধতির অর্থাৎ হিট এন্ড রান। ফলে পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে যখন বৃষ্টির মতো গুলি চলতে শুরু করে, মুক্তিযোদ্ধারা তখন তাঁদের পজিশনে চুপ করে থাকেন। গুলি তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। গুলি থামামাত্র তাঁরা স্থান ত্যাগ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি দ্বিতীয় সপ্তাহেও আক্রমণ চালায়। পরবর্তীতে জয়পুরহাট চিনিকলের অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর পাগলা দেওয়ান ক্যাম্পে এক সাহসী আক্রমণ চালানো হয়। এ আক্রমণে ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। তাদের বেশকিছু অস্ত্র ও পোশাক মুক্তিযোদ্ধারা হস্তগত করেন। কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় পাগলা দেওয়ান পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করলে এবার ৫২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং অনেকগুলো অস্ত্র তাঁদের হস্তগত হয়। এসব আক্রমণের ফলে পাগলা দেওয়ান পাকিস্তানি ক্যাম্পে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড