You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.04 | পাঁজিপুথিপাড়া গণহত্যা (ঝালকাঠি সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

পাঁজিপুথিপাড়া গণহত্যা (ঝালকাঠি সদর)

পাঁজিপুথিপাড়া গণহত্যা (ঝালকাঠি সদর) সংঘটিত হয় ৪ঠা জুন ঝালকাঠি সদর উপজেলায়। মে-জুন মাসে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ-দেশীয় দোসররা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা তাদের ধংসযজ্ঞের পরিধি প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত করে। প্রতিদিনই তাদের আক্রমণের শিকার হতে থাকে শহর ও শহরতলি থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা অসহায় লোকেরা। ৪ঠা জুন সকালে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী নিয়ে হানাদারদের একটি দল পাঁজিপুথিপাড়া গ্রামে হামলা চালায়। তারা প্রথমেই এলাকার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. নীহার রঞ্জন শীলের বাড়ি আক্রমণ করে। এ-সময় সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনদের রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর পাকসেনারা ব্রাশ ফায়ার করলে শিশু-বৃদ্ধসহ ১৫-২০ জন লোক ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। এরপর হানাদাররা গ্রামজুড়ে তাণ্ডব শুরু করে। হানাদারদের আক্রমণের খবর জানতে পেরে আতা, ভীমরুলি ও মাদ্রা ক্যাম্পে অবস্থিত সিরাজ সিকদারের বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা তিনদিক দিয়ে এগিয়ে আসেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় দেশী নৌকা সংগ্রহ করে আসতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। ইতোমধ্যে পাক হানাদার ও রাজাকারআলবদররা পুরো গ্রামটি তচনচ করে দেয়। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িঘর তাদের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর তারা বাউকাঠির পল্লিচিকিৎসক নলিনী রঞ্জন মাল, বসন্ত কুমার বালা, যোগেন্দ্র নাথ হালদার, রাখাল চন্দ্র রায়, শিক্ষক সুরেশ চন্দ্র মণ্ডল, রতিকান্ত বেপারী, ললিত কুমার রায়, শ্রীনাথ চন্দ্র রায়, হরিমোহন শীল, ত্রিনাথ চন্দ্র শীল, মনিকা রাণী শীল, রহিমা বেগম, প্রিয়বালা, খাদিজা বেগম, প্রাণ কুমার হালদার, মানদা রাণী হালদার, হরেকৃষ্ণ চক্রবর্তী, জয়া রাণী রায়, শেফালী রাণী মিস্ত্রীসহ কমপক্ষে ৫০ জনকে হত্যা করে। বিকেল তিনটার দিকে রেজায়ে সাত্তার ফারুক, গিয়াস কবীর এবং হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তিনদিক দিয়ে হানাদারদের আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় দুঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে পাকবাহিনী পিছু হটে লঞ্চে উঠে পালিয়ে যায়। হানদাররা চলে যাওয়ার পর এলাকার লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় নিহতদের লাশগুলো মাটিচাপা দেয়। এদিন হানাদাররা এ গ্রাম থেকে বহু সংখ্যক তরুণীকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। একই দিন অন্যান্যদের সঙ্গে ১১টি শিশুকেও জল্লাদরা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে। এ মর্মান্তিক ঘটনার পর এ গ্রামের বেশির লোক দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। দেশ স্বাধীনের পরেও তাদের অনেকেই আর ফিরে আসেনি। [শ্যামল চন্দ্র সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড