You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.20 | পশ্চিম শাকপুরা গণহত্যা (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

পশ্চিম শাকপুরা গণহত্যা (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম)

পশ্চিম শাকপুরা গণহত্যা (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২০শে এপ্রিল পশ্চিম শাকপুরা দারোগা স্কুলের মাঠ ও তৎসংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। এতে শতাধিক সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালানোর পরপর দারোগা স্কুলের মাঠ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও প্রশিক্ষণ স্থান হিসেবে গড়ে ওঠে। ২০শে এপ্রিল স্থানীয় দালালরা সেখানে মুক্তিযোদ্ধা আছে এ খবর দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে ডেকে আনলে তারা দারোগামাঠ সংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং এই এলাকা ও তদ্সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানের শতাধিক লোককে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে তারা অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার সময় অনেক নারীকে ধর্ষণ করে। পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত শতাধিক লোকের মধ্যে ৮০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সুমতি রঞ্জন বড়ুয়া, নারায়ণ চৌধুরী, যতীন্দ্রলাল দাস, মণীন্দ্রলাল দাস, মিলন চৌধুরী, মিলন বিশ্বাস, সুবল বিশ্বাস, রবীন্দ্রলাল চৌধুরী, রমেশ চৌধুরী-১, ডা. সুখেন্দু বিকাশ দত্ত, আবদুল হাশিম, আবদুল জব্বার, হাবিবুর রহমান লেদু, আহমদ ছফা, প্রদীপ কান্তি দাশ, রায়মোহন চৌধুরী, লালমোহন চৌধুরী, হরিপদ চৌধুরী, অমল চৌধুরী, অমূল্য চৌধুরী, যোগেন্দ্রলাল শুক্লাদাশ, জালাল আহমদ, সেকান্দর আলী, আমির হামজা, অরবিন্দ রায়, নগেন্দ্রলাল শীল, যতীন্দ্রলাল সেন, ধূর্জটি বড়ুয়া, পণ্ডিত রমেশ চন্দ্র বড়ুয়া, রতন চৌধুরী, প্রিয়তোষ চৌধুরী, গৌরাঙ্গ চৌধুরী-১, দয়াল নাথ, রাখাল সিংহ, মনমোহন চক্রবর্তী, শশাঙ্ক ঘোষ, সুখেন্দু বিকাশ চৌধুরী, ধীরেন্দ্রলাল চৌধুরী, বরদা চরণ চৌধুরী, ফয়েজ আহমদ, রঘু নন্দন চৌধুরী, নিকুঞ্জ রায়, ধীরেন্দ্রলাল দে, ফণীন্দ্রলাল দে, নিকুঞ্জ শীল, প্রাণহরি শীল, গৌরাঙ্গ নন্দী, তপন নন্দী, ডা. মধুসূদন চৌধুরী, দীপেশ চৌধুরী, গৌরাঙ্গ প্রসাদ চৌধুরী, বিশু চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী- ১, হরিরঞ্জন চৌধুরী-১, দিলীপ চৌধুরী, দেবেন্দ্ৰ শৰ্মা, মণীন্দ্রলাল খাস্তগীর, বঙ্কিমচন্দ্র সেন, সাধন ঘোষ, গৌরাঙ্গ চৌধুরী-২, হরিরঞ্জন চৌধুরী-২, ডা. পূর্ণ চন্দ্র নন্দী, ব্রজেন্দ্র লাল চৌধুরী, গোপাল চৌধুরী, ধীরেন্দ্র চৌধুরী, রমণী চৌধুরী, উপেন্দ্রলাল চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী-২, বিশ্বেশ্বর আচার্য, দয়ালহরি আচার্য, কামিনী শুক্লা দাশ, নিরঞ্জন চৌধুরী-৩, সুখেন্দু বিকাশ নাগ, ধনঞ্জয় কৈবর্ত, নলিনী কৈবর্ত্য্য, নতুন কৈবর্ত্য্য, আবদুল মতিন, ফণীন্দ্র দাশ, দয়ালহরি শীল ও রমেশ চৌধুরী-২। ২০শে এপ্রিলের পরেও নানা সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দালালরা নিরীহ লোকজনদের ধরে এনে দারোগা স্কুল মাঠে হত্যা করেছে।
গণহত্যার দিন পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ থেকে যারা বেঁচে গিয়েছিল, তারা কয়েকদিন পর ফিরে এসে দেখে দারোগা স্কুলের মাঠ ও তৎসংলগ্ন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় নিহতদের লাশ চতুর্দিকে পড়ে আছে। তারা লাশগুলো সংগ্রহ করে গণকবর দেয়। সেখানে ‘শাকপুরা বধ্যভূমি শহীদ মিনার এবং স্বাধীনতার বেদীমূলে চিরঞ্জীব শহীদদের তালিকা’ নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড