পশ্চিম বৈলতলী রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)
পশ্চিম বৈলতলী রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) আগস্ট মাসে সংঘটিত হয়। এ অপারেশনের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের ২ ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। এতে কমান্ডারসহ ২ জন রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।
চন্দনাইশের পশ্চিম বৈলতলী রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার ছিল মৌলবি শফি। পশ্চিম বৈলতলীতে তার বাড়িতেই ছিল ক্যাম্প। মৌলবি শফি তার দল নিয়ে নিয়মিত পশ্চিম বৈলতলীতে লুটপাট, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যাকাণ্ড ও নারীনির্যাতন চালাত। সে নিয়ম করেছিল প্রতিদিন অন্তত ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করবে। আগস্ট মাসে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিলদার আবু মো. ইসলাম এ রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। রাত ১০টার দিকে আবু মো. ইসলাম ও তাঁর গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্পের কাছে যান। মৌলবি শফির মূল ঘরের দক্ষিণ পাশের ঘরটিই ছিল ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা যখন ক্যাম্পের কাছে যান, তখন মূল ঘরের বাইরে মৌলবি শফি, তার মা ও ভাইয়ের স্ত্রী আলাপরত ছিল। এক দল রাজাকার ক্যাম্পের বাইরে পাহারারত ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প লক্ষ করে পজিশন গ্রহণ করেন। কিছুক্ষণ পর মৌলবি শফির মা ও ভাইয়ের স্ত্রী মূল ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলে মৌলবি শফি ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়। সে ক্যাম্পের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই কমান্ডার আবু মো. ইসলামের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প লক্ষ করে ফায়ার শুরু করেন। তখন ক্যাম্পের বাইরে পাহারারত রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে পাল্টা আক্রমণ করে। ফলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। উভয় পক্ষে প্রচুর গুলি বিনিময় হয়। ২ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর ক্যাম্পের বাইরের রাজাকাররা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ক্যাম্পের ভেতরে মৌলবি শফি ও কালা মিয়া নামে এক রাজাকার নিহত হয়।
এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আবু মো. ইসলাম (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল, চন্দনাইশ; কমান্ডার), নুরুল ইসলাম (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল; সেনাসদস্য), আইয়ুব আলী (পিতা হামিদ হোসেন, বরকল), দুদু মিয়া (পিতা আবদুর রশিদ, বরকল), এস এম গফুর (পিতা ছৈয়দুল হাকিম, বরকল), মো. আবুল কাশেম (পিতা এনু মিয়া, পশ্চিম পাঠানদণ্ডি, বরকল), মো. ইছহাক মিয়া (পিতা মো. এনু মিয়া, পাঠানদণ্ডি, বরকল), মো. ইছহাক (পিতা আলতাপ মিয়া, উত্তর হাশিমপুর), মো. আবদুল জব্বার (পিতা দুলা মিয়া চৌধুরী, বরকল), আনোয়ারুল হক চৌধুরী (বরকল), হিম্মৎ শরীফ (কুনিরবিল, আনোয়ারা উপজেলা), মনছফ আলী (পিতা আবদুর রশিদ, বরকল) ও আবুবকর চৌধুরী (পিতা কবির আহমদ চৌধুরী, বরকল)। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড