পয়লার ব্রিজ যুদ্ধ (মেলান্দহ, জামালপুর)
পয়লার ব্রিজ যুদ্ধ (মেলান্দহ, জামালপুর) সংঘটিত হয় ১০ই নভেম্বর। এতে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
পয়লার ব্রিজে পাকসেনারা প্রায়ই এসে ঘোরাফেরা করত। ঘটনার দিন মাহম্মুদপুর গ্রামের লেবু চেয়ারম্যানের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আহারের প্রস্তুতি চলছিল। এদিন সকাল ১১.৩০টা থেকে ১২.৩০টার মধ্যে বেশ কয়েকজন পাকসেনা এসে ব্রিজে ঘোরাফেরা করতে থাকে। লেবু চেয়ারম্যান এ খবর মুক্তিযোদ্ধাদের জানিয়ে দেন। খবর পেয়ে আলম কোম্পানি ও হেলাল কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা তিনদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী তাঁর এলএমজি দিয়ে ব্রাশফায়ার করলে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা ব্রিজ থেকে নিচে নেমে আসে। এ অবস্থায় বিপরীত দিক থেকে কোনো প্রকার সাড়া না পেয়ে প্লাটুনের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মজনু মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিবর্ষণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, ব্রিজের নিচে যেসব পাকসেনা আছে, তারা হয়তো চারপাশ থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা করছে। এ অবস্থায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মাহেনা ধৌ-এর দিকে এবং কয়েকজন মাহম্মদপুর বাজারের পশ্চিমে মাদার ধৌ-এর দিকে গিয়ে অবস্থান নেন। অপর ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল (নলছিয়া, মাদারগঞ্জ), হায়দার আলী (নলছিয়া, মাদারগঞ্জ), ইউসুফ (দৈওলাবাড়ী, মেলান্দহ), আব্দুর রহিম (দৈওলাবাড়ী, মেলান্দহ) এবং মো. লোকমান হাকিম (কাজলা, ইসলামপুর)-কে আতাউর রহমান ওরফে নোহা মিয়া (ঝারকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক) একটি ডিঙ্গি নৌকায় করে ঝারকাটা নদী পার করে দেন। কিন্তু পাকসেনারা দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে ফেলে এবং অমানবিক নির্যাতনের পর তাঁদের হত্যা করে। তাঁদের লাশ পাওয়া যায়নি।
পয়লার ব্রিজের এ-যুদ্ধে মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ ও ইসলামপুর থানার মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। তবে মূল দায়িত্ব পালন করেন আলম কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের ক্যাম্প ছিল মাদারগঞ্জ বিনোতটংগী স্কুল মাঠে।
এ যুদ্ধে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন- জয়েন উদ্দিন ও আব্দুল কুদ্দুস। [এস এম জুলফিকার আলী লেবু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড