বীর উত্তম নূরুল হক
নূরুল হক, বীর উত্তম (১৯৫৩-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল কাদের এবং মাতার নাম শামসুন নাহার বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম নূর নেছা। নূরুল হক ১৯৬৯ সালে স্থানীয় সিরাজপুর হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। চট্টগ্রামের ইপিআরসি থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের এবোটাবাদ সেনানিবাসে পোস্টিং পান।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নূরুল হক তিন মাসের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। এ-সময় তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরই মধ্যে ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা আর নির্যাতন শুরু করলে এদেশের ছাত্র-জনতা, বাঙালি ইপিআর, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মিলে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন। নূরুল হকও কর্মস্থলে ফিরে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এরপর তিনি ভারতে যান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষিত সৈনিক হবার কারণে তাঁকে মেজর শাফায়াত জামিল, বীর উত্তম-এর কমান্ডে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সংযুক্ত করা হয়। তিনি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ, এম্বুশ ও গেরিলা অপারেশনে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর ছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। ২৭শে নভেম্বর নূরুল হক ও তাঁর দল পাকিস্তানি সৈন্যদের এই ঘাঁটি আক্রমণ করে দখল করে নেন। ২৮শে নভেম্বর ভোর বেলা শত্রুসৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষের গোলাগুলির এক পর্যায়ে শত্রুসৈন্যদের ছোড়া একটি আর্টিলারি গোলার আঘাতে নূরুল হক শহীদ হন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ সিপাহি নূরুল হককে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে (মরণোত্তর) ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৭, খেতাবের সনদ নং ৪০)। এছাড়াও এ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তাঁর নামে শহীদ নূরুল হক অডিটোরিয়াম (কোম্পানীগঞ্জ), শহীদ নূরুল হক সড়ক (নিজ গ্রাম) এবং শহীদ নূরুল হক প্যারেড গ্রাউন্ড ও ট্রেনিং সেন্টার (শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস, ঘাটাইল) করা হয়েছে। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড