বীর প্রতীক নূর মোহাম্মদ
নূর মোহাম্মদ, বীর প্রতীক (১৯৩৮-১৯৭১) হাবিলদার ও কমান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৮ সালের ১০ই মার্চ নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার বালিয়াধর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুর রব পাটোয়ারী ও মাতার নাম আশরাফুন্নেছা। নূর মোহাম্মদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়োজিত ছিলেন।
৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর বিপুল বিজয়ে তিনি একজন বাঙালি সৈনিক হিসেবে সকল বৈষম্য, জাতিগত বিদ্বেষ ও অবিচার থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। মার্চের অসহযোগ আন্দোলন, সাতই মার্চের ভাষণ-এ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা এবং বাঙালি জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার অনীহা ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ তাঁকে সতর্ক করে তোলে। ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে তিনি সুকৌশলে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে যান এবং ২নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম যুদ্ধে আহত হলে তিনি ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে মেজর) হায়দারের অধীনে যুদ্ধ করেন। ক্যাপ্টেন হায়দার ছিলেন একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অকুতোভয় কমান্ডো যোদ্ধা। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডো প্রশিক্ষণ দিতেন এবং একই সঙ্গে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর নেতৃত্বে নূর মোহাম্মদ কমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সম্মুখ যুদ্ধে তিনি সাফল্যের পরিচয় দেন। একই সঙ্গে তিনি এম্বুশ ও গেরিলাযুদ্ধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। নূর মোহাম্মদ বিভিন্ন যুদ্ধে অসংখ্য পাকসেনাকে হত্যা করেন। ৭ই ডিসেম্বর সোনাইমুড়িতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালন করেন এবং মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে তিনি বীরের ন্যায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে হাবিলদার নূর মোহাম্মদের আত্মদান, দেশপ্রেম ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম খোসতারা বেগম। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড