You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.13 | নূরমহল্লা কর্মকারপাড়া গণহত্যা (ঈশ্বরদী, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

নূরমহল্লা কর্মকারপাড়া গণহত্যা (ঈশ্বরদী, পাবনা)

নূরমহল্লা কর্মকারপাড়া গণহত্যা (ঈশ্বরদী, পাবনা) সংঘটিত হয় ১৩ই এপ্রিল। এতে দুশতাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।
পাকসেনারা ১১ই এপ্রিল ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করে। তার আগে স্থানীয় জনতা ও প্রতিরোধযোদ্ধারা পাকশী রেল কলোনি ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আশপাশে দুশতাধিক আবাঙালি বিহারিকে হত্যা করে। পাকসেনারা তাদের লাশ দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বাঙালি নিধনে মেতে ওঠে। এ কাজে তাদের সহায়তা করে অবাঙালি নাছিম, আলমগীর, মোস্তাক আহমেদ ও কুখ্যাত জামায়াত নেতা খোদাবক্স খান। ১২ই এপ্রিল পাকসেনারা গণহত্যার নীলনকশা তৈরি করে এবং ১৩ই এপ্রিল ঈশ্বরদী পৌর এলাকায় চাঁদ আলী মোড়ের পাশে নূরমহল্লার কর্মকার পাড়ায় গণহত্যা চালায়। এ পাড়ায় হিন্দু-মুসলমান মিলে দুশতাধিক পরিবার বাস করত। অল্পকিছু অবাঙালিও ছিল। ১৩ই এপ্রিল পাকসেনারা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে দুশতাধিক নিরীহ লোককে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা যায়, তারা হলেন- আজিজুল গণি চৌধুরী (পিতা ইসমাইল হোসেন, শেরশাহ রোড), আলহাজ আব্দুল বারী (নূরমহল্লা), গোলাম মোহাম্মদ মিন্টু (পিতা আলহাজ আব্দুল বারী, নূরমহল্লা), গোলাম মোস্তফা ঝন্টু (পিতা আলহাজ আব্দুল বারী, নূরমহল্লা), আবু বক্কার (পিতা মোস্তাব আলী, ফতে মাহমুদপুর), মহিবুর রহমান (পিতা হাবিবুর রহমান, ফতে মাহমুদপুর), মতিয়ার রহমান বাবু (পিতা দীন মাহমুদ, ফতে মাহমুদপুর) এবং কৃষাণ শর্মা (পিতা ভগত রায়, পশ্চিম টেংরি)।
এদিন সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে কর্মকার পাড়ার পাল পরিবারে। এ পরিবারের ১২ জন সদস্য শহীদ হন। তারা হলেন— চন্দ্রকান্ত পাল (পিতা শ্রীধর চন্দ্র পাল), জগেন্দ্রনাথ পাল (পিতা চন্দ্ৰকান্ত পাল), রেণুকা রানী পাল (স্বামী জগেন্দ্রনাথ পাল), গণেশ চন্দ্র পাল (পিতা জগেন্দ্রনাথ পাল), দীপালি রানী পাল (স্বামী গণেশ চন্দ্র পাল), চায়না রানী পাল (পিতা খগেন্দ্র নাথ পাল), দিলীপ চন্দ্র পাল (পিতা গণেশ চন্দ্র পাল), নরেশ চন্দ্র পাল (পিতা গণেশ চন্দ্ৰ পাল), লক্ষ্মী রানী পাল (পিতা গণেশ চন্দ্র পাল), বাসন্তী রানী পাল (পিতা গণেশ চন্দ্র পাল), সন্ধ্যা রানী পাল (পিতা গণেশ চন্দ্ৰ পাল) এবং গোপাল চন্দ্র পাল। নারান নামের এক সুইপার ১২টি লাশ বাড়ির উঠানে গর্ত করে মাটিচাপা দেয়। পাল পরিবারের চারটি ছোট্ট শিশু রক্ষা পায়। তারা হলো- মাধব চন্দ্র পাল, গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল, গৌতম চন্দ্র পাল ও জগদীশ চন্দ্র পাল। অবিভাবকহীন এ চারটি শিশুকে নারান সুইপার তার বাড়ি নিয়ে যায়। সেদিনের বেঁচে যাওয়া ঐ শিশুদের মধ্যে মাধব চন্দ্ৰ পাল বিখ্যাত মিষ্টির দোকান ‘পাল রেস্টুরেন্ট এন্ড পাল সুইটস’-এর মালিক। [মো. ছাবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড