বীর বিক্রম নীলমনি বিশ্বাস
নীলমনি বিশ্বাস, বীর বিক্রম (১৯৫০-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। সিলেট সদরের কুচাই ইউনিয়নের চিতা শ্রীরামপুর গ্রামে তিনি ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অতুল রাম সরকার ও মাতার নাম মান্যবালা বিশ্বাস।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নীলমনি সরকার ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৪নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত, বীর উত্তম-এর অধীনে যোগদান করেন। এ সেক্টরের অধীনে অনেক যুদ্ধে তিনি সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে কানাইঘাট এলাকার যুদ্ধ ছিল ৪নং সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিযান। সিলেট জয় করতে হলে মেজর সি আর দত্তের জন্য সর্বাগ্রে এই কানাইঘাট দখল করা ছিল জরুরি। তাই এ- যুদ্ধের জন্য অধিনায়ক ৪০০ মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে ৪টি কোম্পানি গঠন করে প্রস্তুতি নেন ৩রা ডিসেম্বর রাত ১টায় শুরু হয়ে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধের পর এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ সামনাসামনি অবস্থানে উপনীত হয়। শুরু হয় উভয় বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি যুদ্ধ। অবস্থা বেগতিক দেখে এক সময় পাকসেনারা দৌড়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে গিয়ে নিজেদের পোঁতা মাইন বিস্ফোরণে নিজেরাই হতাহত হতে থাকে। যারা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে প্রাণ হারায়। বেলা প্রায় ১১টায় কানাইঘাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। মরণপণ এ-যুদ্ধে অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করে নীলমনি বিশ্বাসসহ ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ১৫ জন আহত হন। বিপরীতে শত্রুপক্ষের ৫০ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা ও জীবন উৎসর্গ করায় শহীদ নীলমনি বিশ্বাসকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড