You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর উত্তম নাসির উদ্দিন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর উত্তম নাসির উদ্দিন

নাসির উদ্দিন, বীর উত্তম (১৯৪০-১৯৭১) মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম লাল মিয়া এবং মাতার নাম মাজেদা বেগম। তিনি এক কন্যা ও তিন পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সুফিয়া খাতুন।
নাসির উদ্দিন ১৯৫৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধীরেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম ইপিআরসি থেকে প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর তিনি ১নং ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে পোস্টিং পান। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি হাবিলদার পদে এ রেজিমেন্টে করাচিতে কর্মরত ছিলেন। জানুয়ারি মাসে তিনি তিন মাসের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ২৫পশ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে বাঙালি সামরিক, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে এদেশের ছাত্র- জনতা প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করে। নাসির উদ্দিনও তাঁর কর্মস্থলে যোগদান না করে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি ভারত যান এবং ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১নং সেক্টরের বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। পরবর্তীকালে ব্রিগেড ফোর্স গঠিত হলে তিনি ‘জেড’ ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তর্গত নকলী বিওপি ছিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্ত প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। ৩রা আগস্ট মধ্যরাতে মুক্তিবাহিনী এ ঘাঁটি আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একটি গ্রুপে ছিলেন নাসির উদ্দিন। পরিকল্পনামতো মুক্তিবাহিনী সঠিক সময়েই এফইউপিতে পৌছায়। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ঠা আগস্ট ভোর রাতে আর্টিলারি ফায়ারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরাও আর্টিলারি কামান ও মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। নাসির উদ্দিন অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে ক্ষিপ্রগতিতে শত্রুর ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। এ-যুদ্ধে শত্রুসেনারা পরাস্ত হয় এবং তাদের বহু সদস্য হতাহত হয়। কিন্তু নাসির উদ্দিন শত্রু বাহিনীর গোলার আঘাতে শহীদ হন। নকশী বর্ডারের কাছে শালবনে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ হাবিলদার নাসির উদ্দিনকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৩, খেতাবের সনদ নং ৩৬)। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তাঁর নিজ গ্রামের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় ‘শহীদ নাসির উদ্দিন সড়ক’। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড