You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.19 | নিকলী থানা যুদ্ধ (নিকলী, কিশোরগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

নিকলী থানা যুদ্ধ (নিকলী, কিশোরগঞ্জ)

নিকলী থানা যুদ্ধ (নিকলী, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৯শে অক্টোবর। এতে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং নিকলী থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
নিকলী সদরের জি সি হাইস্কুলে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। অন্যদিকে নিকলী থানা ভবনে পুলিশ ও আনসারদের ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এ দুই ক্যাম্পের পতন ঘটিয়ে নিকলীকে শত্রুমুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ-যুদ্ধের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক আবীর, রিয়াজুল ইসলাম খান বাচ্চু, সিদ্দিক প্রমুখ। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা তাঁদের জন্য সহজ ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের এ সিদ্ধান্তের কথা শুনে পাকিস্তানিদের সম্ভাব্য নৃশংসতার কথা ভেবে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও তাঁদের নিবৃত করার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ মাস্টার ও সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল জব্বার মাস্টার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের আক্রমণ পরিচালনা থেকে সাময়িক বিরত থাকার অনুরোধ জানান। তাদের ভয় ছিল, মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হতে না পারলে শত্রুবাহিনী নিকলীর সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবস্থানে অনড় থাকেন।
১৮ই অক্টোবর মোজাম্মেল হক আবীর ও রিয়াজুল ইসলাম খান বাচ্চু অন্য যোদ্ধাদের নিয়ে পূর্বগ্রাম, নগর ও টিক্কলহাটির দিক থেকে নিকলী হাইস্কুলে অবস্থানরত রাজাকারদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করেন। কিন্তু এ আক্রমণে তাঁরা সফল হতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করেন। পরদিন ১৯শে অক্টোবর হিলচিয়া ও গুরুই ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় তাঁরা নিকলী থানায় আক্রমণ চালান। এতে মতিয়র রহমান, বীর বিক্রম- ও অন্য যোদ্ধারাও অংশ নেন। সারাদিন পাকবাহিনী, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র যুদ্ধ চলে। এক সময় রাজাকার, আনসার ও পুলিশরা ৪৫টি ৩০৩ রাইফেল ও গোলাবারুদ রাজাকার আমির উদ্দিন আহম্মদের বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায়। নিকলী শত্রুমুক্ত হয়। ১৯শে অক্টোবর নিকলীর মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল- সবুজ পতাকা উত্তোলিত হয়। চারদিকে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ধ্বনিত হয়। নিকলী যুদ্ধে ২০ থেকে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। উপরে উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও অন্যরা হলেন- হাবিবুর রহমান ঠাকুর, লাল মিয়া, নেফর, মালু মিয়া প্রমুখ। নিকলী যুদ্ধে এ উপজেলার ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন- আব্দুল মালেক মালু (পিতা আব্দুল গণি, পূর্বগ্রাম), নান্টু মিয়া (পিতা নূর শামসুদ্দিন ওরফে সাচুনি, পূর্বগ্রাম), মতিউর রহমান (পিতা আব্বাছ আলী সরকার, গুরুই) এবং মেঘু মিয়া (পিতা নূর মুহাম্মদ, ষাইটধার)।
হাওর এলাকায় সংঘটিত এ-যুদ্ধ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এ- যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের ফলে পুরো এলাকায় পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। একে-একে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ মুক্তিযোদ্ধাদের অধীনে চলে আসে। [মহিবুর রহিম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড