বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাই পাভলোভিচ ফিরুবিন
নিকোলাই পাভলোভিচ ফিরুবিন (১৯০৮-১৯৮৩) সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’য় ভূষিত সোভিয়েত রাজনীতিক।
নিকোলাই ১৯০৮ সালের ৪ঠা এপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সিমবিস্ক শহরে (বর্তমান উলিয়ানোভস্কে) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি মস্কো এভিয়েশন ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কিছুদিন একটি বিমান কারখানায় চাকরি করার পর তিনি সরকার ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৪৬ সাল থেকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কো শহর কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি চেকোস্লোভাকিয়া ও যুগোস্লাভিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সাল থেকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের উপ- পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। দেশ সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একাধিক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের উপ- পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাই ফিরুবিন বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। ১৮ই অক্টোবর মস্কোয় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার দেশের পক্ষ থেকে পাক-ভারত সীমান্তে মোতায়েনকৃত পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহারের মার্কিন-সোভিয়েত যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করলে দিল্লি সফরকালে সোভিয়েত উপ- পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাই ফিরুবিন ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ২৩শে অক্টোবর স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি এবং পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত রাজনৈতিক নিষ্পত্তি সাধন ছাড়া কেবল সীমান্ত অঞ্চল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমে যুদ্ধের আশঙ্কা রোধ করা সম্ভব নয়৷’ ২৭শে অক্টোবর ফিরুবিনের ভারত সফর শেষে দুদেশের পক্ষ থেকে এক যৌথ ঘোষণায় বলা হয় যে, ভারত কোনোরূপে আক্রান্ত হলে সে অবস্থায় ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি (৯ই আগস্ট ১৯৭১) কার্যকর হবে, অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পাশে অবস্থান নেবে। এভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ফিরুবিন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ নিকোলাই পাভলোভিচ ফিরুবিন-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির ও হারুন-অর-র -রশিদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড