You dont have javascript enabled! Please enable it! নাওড়া যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

নাওড়া যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর)

নাওড়া যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এতে ২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়৷
শাহরাস্তি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হলো নাওড়া যুদ্ধ। পাকসেনারা বিভিন্ন রেলসেতুর নিচে ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘাঁটি করে যুদ্ধ পরিচালনা করত। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ঘাঁটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য নানা পরিকল্পনা করতে থাকেন। ৩০শে মে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ফরিদ উল্যা চৌধুরী, মো. ফারুক, মো. মহসিন, গোলাম সরোয়ার, মোস্তাক আহমদ, আবদুল মান্নান বিএসসি, কামাল পাশা মজুমদার, আমিন উল্যাহ মাস্টার, আবদুল কুদ্দুছ, রুস্তম আলী, আবদুল ওয়াদুদ, বদিউল আলম মাস্টার ও ইদ্রিস মোল্লাসহ আরো অনেকে এলাকার জনগণের সহায়তায় প্রায় ২০০ গজ রেললাইন উপড়ে ফেলেন ও তৎসংলগ্ন ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলেন। এ ব্রিজেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় রাজাকারা পাহারা দিত। ফতেপুর পাটওয়ারী বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা রাত্রি যাপন করতেন। ১৩ই জুলাই রাত ১২টার দিকে রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনারা ঐ বাড়িটি ঘিরে ফেলে। বাড়িতে ঢুকে তারা ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মোশারফ হোসেন পাটওয়ারী (পিতা আবুল হাশেম পাটওয়ারী), আবুল হাশেম পাটওয়ারী (পিতা মেহের আলী পাটওয়ারী), নায়েক ফয়েজ উদ্দিন পাটওয়ারী (পিতা ছাদেক আলী পাটওয়ারী), আমিন উল্যাহ পাটওয়ারী (পিতা লোফতে আলী পাটওয়ারী) এবং উবায়েদ উল্যাহ পাটওয়ারী (পিতা লোফতে আলী পাটওয়ারী)।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব হাজীগঞ্জ বিএলএফ বাহিনীর ১৫-২০ জন মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার (বড়তুলা)- এর নেতৃত্বে কালিয়াপাড়া ফকির বাড়িতে অবস্থান নেন। গোয়েন্দা মারফত সংবাদ আসে যে, নাওড়া মঠের বাঙ্কারে ২০-২২ জন পাকিস্তানি সেনা অবস্থান করছে। এখানে পাকহানাদারদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ১ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকসেনাদের আক্রমণের উদ্দেশ্যে আবুল বাশারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নাওড়ার পার্শ্ববর্তী গ্রাম ঘুঘুশালে অবস্থান করেন। ঘুঘুশাল গ্রাম রেললাইনের উত্তর পাশে। পাকসেনাদের অবস্থান নিশ্চিত, হওয়ার পর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালায়। ৭-৮ মিনিট গোলাগুলির পর নাওড়া মঠ থেকে পাকসেনারা বের হয়ে এসে রেল লাইনের পূর্বদিকে পালিয়ে যায়। এদিকে ১ জন পাকসেনা প্রাণ বাঁচাতে কচুরিপানা ভর্তি পুকুরে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে পাকবাহিনীর ঐ সেনা সদস্যকে হত্যা করেন। ঐ সৈনিকের চাইনিজ রাইফেলটি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। [মো. মিজানুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড