বীর প্রতীক নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৭) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৪ই নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বাংগরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. ওয়ালি মিয়া এবং মাতার নাম রোকেয়া বেগম। নজরুল ইসলাম বাংগরা ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি এবং ফতেহপুর কেজি বাইলেটারাল হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। নজরুল ইসলাম ১৯৬৮ সালের ১৪ই নভেম্বর ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল)-এ যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ঢাকার পিলখানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তাঁকে রংপুর ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে নিযুক্ত করা হয়। এখান থেকে তিনি কুড়িগ্রাম মহকুমার ফুলবাড়ি থানাধীন গঙ্গারহাট বিওপি-তে নিয়োজিত হন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের কয়েক দিন পূর্বে তিনিসহ আরো কয়েকজন বাঙালি ইপিআর সদস্যকে সেখান থেকে ক্লোজ করে লালমনিরহাটের মোঘলহাটে আনা হয়। এখান থেকে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
২৬শে মার্চ মোঘলহাট বিওপি-তে সকল বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্র করে রাখা হয়। রংপুরের ক্যালাবন ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে বাঙালিদের হত্যা করা হয়েছে এ খবর পেয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে নজরুল ইসলাম ও অন্য বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করেন। তাঁরা লড়াই করে ওখানকার সকল বেলুচ, পাঞ্জাবি ও বিহারি সদস্যদের হতাহত করেন। নজরুল ইসলামের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন সুবেদার আরব আলী। আরব আলীর নেতৃত্বে তাঁরা লালমনিরহাটে ছোট- ছোট অপারেশন পরিচালনা করেন। এক পর্যায়ে তাঁরা লালমনিরহাট বিমানবন্দরে ডিফেন্স নেন। পাকবাহিনী বিমান হামলা শুরু করলে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তিনি অন্য কয়েকজনের সঙ্গে ভারতের কুচবিহার জেলার দীনহাটা থানার গিদলদা ক্যাম্পে যান। এখান থেকে তাঁরা লালমনিরহাটের বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন করেন। তাঁদের আক্রমণে লালমনিরহাট বিমান বন্দরের মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হয়। তিনি কুড়িগ্রামের ইটেরভাঙ্গা এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ যুদ্ধে অংশ নেন।
সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে নজরুল ইসলাম ৬ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর সাব-সেক্টরে ক্যাপ্টেন নওয়াজেস উদ্দিনের অধীনে যুদ্ধ করেন। তিনি ভুরুঙ্গামারি থানা দখল, নাগেশ্বরী হাসপাতাল দখল, লালমনিরহাটের দুরগাকুঠি যুদ্ধ, ঠ্যাংজারা বিওপি যুদ্ধ, ফুলবাড়ি থানা অপারেশন, অন্ধারি ঝাড় যুদ্ধ প্রভৃতি সম্মুখ যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার নজরুল ইসলামকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪৬৮, খেতাবের সনদ নম্বর ২১৮)।
মুক্তিযুদ্ধের পর নজরুল ইসলাম সেনাবাহিনীর ১৪ ব্যাটলিয়নে নায়েক হিসেবে রংপুরে যোগদান করেন। এ ব্যাটালিয়ন রংপুর থেকে কুমিল্লায় বদলি হয় ৷ এখান থেকে তিনি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যোগদানের সুযোগ পেলে ১৯৭২ সালের শেষের দিকে সিপাহি হিসেবে বিডিআর-এ যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি বিডিআর- এর নায়েক, ১৯৭৮ সালে হাবিলদার, ১৯৮৮ সালে নায়েক সুবেদার, ১৯৯৬ সালে সুবেদার এবং ২০০২-এ সুবেদার মেজর হন। ২০০৪ সালে তিনি বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা পরিচালক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। তিনি সমাজ কল্যাণমূলক কাজেও নিজেকে জড়িত করেন। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রেনু আরা বেগম। নজরুল ইসলাম বর্তমানে কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ির দক্ষিণ বাগমারায় নিজের বাড়িতে বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড