You dont have javascript enabled! Please enable it! নড়াইল লঞ্চঘাট বধ্যভূমি (নড়াইল সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

নড়াইল লঞ্চঘাট বধ্যভূমি (নড়াইল সদর)

নড়াইল লঞ্চঘাট বধ্যভূমি (নড়াইল সদর) নড়াইল জেলা সদরের জজ আদালতের লাগোয়া পূর্বপাশে চিত্রা নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা এ লঞ্চঘাটের পন্টুনের ওপর প্রায় ৩ হাজার লোককে জবাই ও গুলি করে হত্যার পর নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এর নেতৃত্ব দেয় নড়াইল মহকুমা শান্তি কমিটি-র চেয়ারম্যান কুখ্যাত রাজাকার সোলাইমান মোল্যা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার উদ্যোগে নড়াইল ডাকবাংলো (বর্তমান নড়াইল জেলা পরিষদ ডাকবাংলো)-সহ বিভিন্ন স্থানে রাজাকার ও নির্যাতনক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর নড়াইলের সবচেয়ে ঘৃণিত এই ব্যক্তির নির্দেশে নড়াইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভারতগামী শরণার্থী, নিরীহ বাঙালি, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের ধরে এনে এসব ক্যাম্পে নির্যাতন করা হতো। পরে তাদের হাত-পা বেঁধে লঞ্চঘাটের পন্টুনের ওপর নিয়ে জবাই ও গুলি করে হত্যার পর নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো।
রাজাকার সোলাইমানের কাছে বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দিদের একটি তালিকা থাকত। যাদের হত্যা করা হবে, প্রতিরাতে সে ঐ তালিকায় তাদের নামের পাশে লালকালি দিয়ে টিক চিহ্ন দিত এবং লিখে রাখত ‘রিলিজ ফর ইভার’। পরে শহরের বরাশোলার ওমর, কাগজিপাড়ার মোমরেজ, ফুলসরের ওহাব ও পেড়লির আশরাফকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দায়িত্ব দেয়া হতো। জল্লাদরা প্রত্যেকে জবাইয়ের জন্য জনপ্রতি ১০টাকা করে বকশিস পেত। বর্তমানে লঞ্চঘাটটি আর নেই। দুবছর আগে এ বধ্যভূমির পাশে চিত্রা নদীর পাড়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
নড়াইল লঞ্চঘাট বধ্যভূমিতে অসংখ্য লোককে হত্যা করা হলেও তাদের মাত্র কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন— নড়াইল সদরের শাহাবাদ ইউনিয়নের ধোন্দা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মকলেস ফকির, লোহাগড়া থানার কুমড়ি গ্রামের শিক্ষক কাজী বেলায়েত হোসেন, যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার শামছুসজালাল বাবুল, শেখাটি ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামের ইবরার শেখ, নায়েব আলী সরদার, সোবহান সরদার, লাল মিয়া শেখ ও ছব্দুল শেখ। এদের সবাইকে নড়াইল ডাকবাংলোয় ধরে এনে নির্যাতনের পর লঞ্চঘাটের পন্টুনের ওপর নিয়ে জবাই করে চিত্রা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। ২০১০ সালের ২০শে জুলাই মহিষখোলা গ্রামের শহীদ ইবরার শেখের ভাই আলাউদ্দিন শেখ বাদি হয়ে নড়াইল শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মওলানা সোলাইমান ও তার ৭ সহযোগীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নড়াইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। [শামীমূল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড