ধুলাউড়ি গণহত্যা (সাঁথিয়া, পাবনা)
ধুলাউড়ি গণহত্যা (সাঁথিয়া, পাবনা) সংঘটিত হয় ২৭শে নভেম্বর। এতে ১১জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২৭ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
সারাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধা সাঁথিয়া থানার ধুলাউড়ি গ্রামে এসে অবস্থান নেন। একই গ্রামে সবার অবস্থান করা নিরাপদ নয় ভেবে তাঁরা ভাগাভাগি করে পার্শ্ববর্তী বিলসলঙ্গী, রামকান্তপুর, পাইকশা, নাড়িয়াগদাই প্রভৃতি গ্রামে রাত যাপনের ব্যবস্থা করেন। সাঁথিয়া সদর থেকে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার ভেতরে জায়গাটি নিরাপদ ভেবে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল, সকাল হলেই পরবর্তী আক্রমণের জন্য সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেবেন। এদিকে কিছুদিন আগে (সেপ্টেম্বর মাস) মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া বিদ্যালয়ে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করে ৯ জন রাজাকারকে হত্যা এবং তাদের অস্ত্র লুট করে নেন। এ ঘটনায় পাকিস্তানি দালালরা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। পাকসেনারাও সাঁথিয়ার ওপর বিশেষ নজর রাখছিল। তারা এ হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের অপেক্ষায় ছিল। ২৭শে নভেম্বর রাত ৩টার দিকে দালালদের সহায়তায় প্রায় ৬০০ পাকসেনা খুব কৌশলে ধুলাউড়ি গ্রাম ঘিরে ফেলে। ডিউটিরত মুক্তিযোদ্ধারা সময়মতো তাঁদের সহযোদ্ধা ও গ্রামবাসীকে সতর্ক করার সুযোগ পর্যন্ত পাননি। পাকসেনারা হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালাতে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধা ও ঘুমন্ত গ্রামবাসীরা হতবিহ্বল হয়ে প্রাণভয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। পাকসেনারা নিরীহ গ্রামবাসীকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। যুবতি মেয়েদের ধরে এনে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অসহায় সাধারণ মানুষদের রশি দিয়ে বেঁধে ইচ্ছামতি নদীর পাড়ে এনে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। এদিন ধুলাউড়িতে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন- ডা. আব্দুল আউয়াল খলিফা (পিতা ডা. আব্বাস উদ্দিন খলিফা, ধুলাউড়ি, নূরদহ), আবুল কাশেম ফকির (পিতা কছিম উদ্দিন ফকির, ঐ), জহুরুল ইসলাম ফকির (পিতা রইচ উদ্দিন ফকির, ঐ), আব্দুর রশিদ ফকির (পিতা মুজিবুর রহমান ফকির, ঐ), কোবাদ আলী বিশ্বাস (পিতা আব্বাস আলী বিশ্বাস, ঐ), আব্দুল গফুর খলিফা (পিতা হেলাল উদ্দিন খলিফা, ঐ), আবু নঈম খলিফা (পিতা কফিল উদ্দিন খলিফা, ঐ), আব্দুস সামাদ খলিফা (পিতা তজিম উদ্দিন খলিফা, ঐ), আকতার তালুকদার (পিতা গফুর তালুকদার, রতনপুর, ডেমড়া), ওয়াজেদ আলী (পিতা আহসম আলী, নতুনপাড়া, নূরদহ) এবং মাখন বেওয়া (পিতা স্বামী স্বরপদী বিশ্বাস, ঐ)।
গণহত্যায় শহীদ সাধারণ মানুষদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- রঘুনাথপুরের দারা মিয়া, চাঁদ আলী বিশ্বাস ও শামছুর রহমান, আখতার হোসেন (ইসলামপুর), খবির উদ্দিন বিশ্বাস (পদ্মবিলা; তার হাত-পা বেঁধে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়), মহসিন আলী মধু (কাজীপুর), শিহাব উদ্দিন শেখ (চড়পাড়া), মোকছেদ আলী (বামনডাঙ্গা) ও আব্দুস সামাদ (রুদ্রগাতি)। এলাকাবাসী শহীদদের ধুলাউড়ি ফকিরপাড়া প্রাইমারি স্কুলের সামনে গণকবর দেয়। পরবর্তীকালে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [মো. আবদুল মজিদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড