ধোপাছড়ি গণহত্যা (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)
ধোপাছড়ি গণহত্যা (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ১১ই নভেম্বর। চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়িতে পাকবাহিনী, শান্তি কমিটি – ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা এ গণহত্যা সংঘটিত করে। সেদিন ছিল ধোপাছড়ি বাজারের দিন। দুপুর আড়াইটার দিকে হানাদাররা হত্যাকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে বান্দরবান ও দোহাজারী থেকে এসে বাজারে আক্রমণ করে। তখন ধোপাছড়িতে অবস্থানরত সুলতান আহমদ কুসুমপুরী বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। হাবিলদার আবু মোহাম্মদ ইসলামের (পিতা হামিদ হোসেন) নেতৃত্বে কুসুমপুরী বাহিনী ধোপাছড়ি বাজার ও নিকটস্থ ফরেস্ট অফিস এলাকায় হানাদারদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ করে। এক পর্যায়ে হানাদাররা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর গুলিতে কুসুমপুরী বাহিনীর তিনজন সদস্য এবং পাঁচজন সাধারণ লোক শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে তিনজন সাধারণ লোকের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন- আলী বসু (পশ্চিম ধোপাছড়ি), কাদের (পশ্চিম ধোপাছড়ি) এবং হাজি আবদুর রশিদ (পশ্চিম ধোপাছড়ি)। বাকি দুজনের মধ্যে একজন ধোপা, যিনি ‘চিত্তরঞ্জন মজুমদারের বাবা’ নামে পরিচিত ছিলেন।
এ ঘটনার আগে-পরেও ধোপাছড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে বান্দরবানের বালাঘাটা থেকে পাকসেনা ও রাজাকাররা পূর্ব ধোপাছড়ির চেমিরমুখ বড়ুয়াপাড়ায় এসে সেখানকার সবগুলো বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তারা আসার আগে বেশিরভাগ লোকজন অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছিল। বড়ুয়াপাড়ায় আগুন দেখে সেখান থেকে অল্পদূরে বিলে কর্মরত সঞ্জীব বড়ুয়া (চেমিরমুখ, বড়ুয়াপাড়া) ও শান্তি বড়ুয়া (পিতা গোবিন্দ বড়ুয়া, চেমিরমুখ, বড়ুয়াপাড়া) নামে দুজন কৃষক ছুটে এলে পাকবাহিনী তাদের ধরে চেমি খালের মুখে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং তাদের লাশ খালে ফেলে দেয়। ২৯শে সেপ্টেম্বর রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে পাকবাহিনী ধোপাছড়ি বাজারে এসে তাণ্ডব শুরু করলে সুলতান আহমদ কুসুমপুরী বাহিনীর একদল মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। সে-যুদ্ধে পাকবাহিনীর গুলিতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁদের একজনের নাম সুলতান আহমদ (পিতা ফেরু মিয়া, রসুলাবাদ, কালিয়াইশ, সাতকানিয়া)। একই মাসে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর হাতে আরো তিনজন নিরীহ লোকের শহীদ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ১২ই নভেম্বর সুলতান আহমদ কুসুমপুরী বাহিনী ভারতের উদ্দেশ্যে ধোপাছড়ি ত্যাগ করার পর পাকবাহিনী ও রাজাকাররা পুনরায় ধোপাছড়িতে এসে ধোপাছড়ি বাজার ও ধোপাছড়ি বনবিহারে অগ্নিসংযোগ করে। এর পরদিন তারা ধোপাছড়ির নাইক্ষ্যংছড়ি বড়ুয়াপাড়ায় গিয়ে সেখানকার কুমারি বড়ুয়ার ভিটায় তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র রেবতি বড়ুয়ার ঘরটি পুড়িয়ে দেয়।
ধোপাছড়িতে এসব হত্যাকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয় যেসব দালাল জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো: মীর আবুল বশর মাস্টার (চিরিংঘাটা, ধোপাছড়ি), নজু মিয়া (ধোপাছড়ি), সিরাজুল ইসলাম (ধোপাছড়ি), আহমদ ছফা (চিরিংঘাটা), আহমদ নবী (চিরিংঘাট), আমজু মাতবর (ধোপাছড়ি), ঘোড়া বাদশা (দোহাজারী), বদি মাঝি (চাগাচর) এবং সোলায়মান ওরফে বাদাইয়্যা (চিরিংঘাটা)। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড