You dont have javascript enabled! Please enable it! ধানুয়া-কামালপুর যুদ্ধ (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

ধানুয়া-কামালপুর যুদ্ধ (বকশীগঞ্জ, জামালপুর)

ধানুয়া-কামালপুর যুদ্ধ (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে। এ-যুদ্ধে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া-কামালপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি ঘাঁটি ছিল। ধানুয়া- কামালপুরের উত্তরে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকা। এখান থেকে কামালপুর পাকছাউনি মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে। জুলাই মাসে জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল জেলা এবং যমুনা নদীর তীরাঞ্চল গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার কিছু অংশ নিয়ে ১১ নম্বর সেক্টর গঠিত হয়। মেজর তাহের আগস্ট মাসে এ সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১১ নম্বর সেক্টরকে ৭টি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। সাব-সেক্টরগুলো ছিল- মানকার চর, মহেন্দ্রগঞ্জ, পুরাকাশিয়া, ঢালু, বাঘমারা, শিববাড়ি ও রংড়া। মহেন্দ্রগঞ্জে এ সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করা হয়। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল্লাহ খানকে মানকার চর ও লে. মান্নানকে মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকার-এর ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন কমিশন্ড অফিসার এ সেক্টরে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন লে. মিজানুর রহমান ও ক্যাপ্টেন আজিজ পিএসসি। মহেন্দ্রগঞ্জ হেডকোয়ার্টার্সে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন সৈয়দ মনিরুজ্জামান। অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে ধানুয়া কামালপুরের পাকিস্তানি ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে পাকবাহিনীর সঙ্গে এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে লে. মান্নান লে. মিজানুর রহমান ও ক্যাপ্টেন আজিজ পিএসসির নেতৃত্বে পাকক্যাম্প আক্রমণের উদ্দেশ্যে গভীর রাতে বাংকার নির্মাণ করে অবস্থান নেন। ভোররাতে কামালপুরের ক্যাম্প থেকে পাকসেনারা ভারী কামান ও মেশিনগানের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা গুলিবর্ষণ করেন। প্রায় দুঘণ্টা ধরে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলে। মুক্তিবাহিনীর কাছে খুব বেশি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। অন্যদিকে পাকসেনারা নানারকমের ভারী আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত ছিল। এক পর্যায়ে তারা সুরক্ষিত কামালপুর ঘাঁটি থেকে বৃষ্টির মতো অবিরাম শেলিং করতে থাকে। এলোপাতাড়ি ও তীব্র শেলের আঘাতে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এ-যুদ্ধে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁদের এখানে কবর দেয়া হয়। পরে চারপাশে ইটের দেয়াল দিয়ে স্থানটি সংরক্ষণ করা হয়। [রজব বকশী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড