You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.12 | ধরলা যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

ধরলা যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম)

ধরলা যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম) সংঘটিত হয় ১২ই আগস্ট। এর পূর্বে ১১ই আগস্ট কুলাঘাট যুদ্ধ-এ ১২ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ১২ই আগস্ট পাকিস্তানি হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করলে ধরলা যুদ্ধ শুরু হয়। এ-যুদ্ধে ৬০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনস্থ সাহেবগঞ্জ ও গীতলদহ সাব- সেক্টরের অন্যতম বীর যোদ্ধা কোম্পানি কমান্ডার কে এম আকরাম হোসেন তাঁর দলকে মোঘলহাট, কুলাঘাট ও গোরকমণ্ডল এলাকায় নিযুক্ত করেন। তিনি মোঘলহাট ব্রিজসহ বেশকিছু অপারেশন পরিচালনা করেন। তাঁর দলে অনেক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সাব-সেক্টরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ই আগস্ট তাঁকে তাঁর কোম্পানিসহ গিতালদহ ফুলবাড়ী এলাকায় বদলি করা হয়। তিনি তাঁর কোম্পানি নিয়ে সীমান্তের কাছাকাছি একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তিনি তাঁর কোম্পানির বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাকে ধরলা নদী তীরবর্তী কাউয়াহাগা, লক্ষ্মীকান্ত ও নাগেশ্বরীর নিকটবর্তী গাগলা এলাকায় পাঠান। কুলাঘাট পূর্ব থেকেই কোম্পানি কমান্ডার বদরুজ্জামান মিয়ার টহলের আওতাধীন ছিল। বদরুজ্জামান মিয়া ছিলেন ফুলবাড়ী থানার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক। কুলাঘাটে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ব্যাপক প্রতিরোধ হয়। পরে সেখানে যুক্ত হন কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। তাঁদের বাহিনী ও স্থানীয় ছাত্র-জনতার ব্যাপক প্রতিরোধের কারণে পাকিস্তানিরা ধরলা নদী অতিক্রম করে ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করতে পারেনি। আকরাম হোসেনের বাহিনী এখানে মোতায়েন হলে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
কুলাঘাট যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পরদিন রাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের ৬০ জনের একটি দল কুলাঘাট দিয়ে ধরলা নদী অতিক্রম করে ফুলবাড়ী দখলের লক্ষ্যে ৩টি নৌকাযোগে অগ্রসর হতে থাকে। তাদের সঙ্গে মেশিনগান ও কামানসহ ভারী অস্ত্র ও প্রচুর গোলাবারুদ ছিল। পাকিস্তানিরা যখন নৌকায় ফুলবাড়ীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন নদীর উত্তর তীরে আগে থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক প্রহারায় ছিলেন। বালুচরে বাংকার করে তাঁরা প্রহরা বসিয়েছিলেন। পাকসেনাদের দলটি নদীর মাঝখানে আসার সঙ্গে-সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেল, এসএলআর ও এলএমজি নিয়ে আক্রমণ করেন। পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র সংকটে পড়েন। এ-সময় বদরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বাধীন ৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধা টু- ইঞ্চি-মর্টার নিয়ে সেখানে যোগ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে নৌকায় থাকা সকল পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। এ-যুদ্ধে কোম্পানি কমান্ডার আকরাম হোসেন, বদরুজ্জামান মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, জাকির হোসেনসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। যুদ্ধের দুদিন পর কুড়িগ্রাম শহরের পাশে সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় ধরলা নদীতে পাকসেনাদের ৩২টি লাশ পাওয়া যায়। এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর কোনোদিন কুলাঘাটের দিকে অগ্রসর হয়নি। ফলে ফুলবাড়ী সব সময় স্বাধীন ও মুক্তাঞ্চল থেকে যায়। [আব্দুল খালেক ফারুক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড