You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক দেলোয়ার হোসেন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক দেলোয়ার হোসেন

দেলোয়ার হোসেন, বীর প্রতীক (১৯৫৬-২০১০) সেনাবাহিনীর সৈনিক ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর ইউনিয়নের নিলাখাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল হাই এবং মাতার নাম রোকেয়া বেগম। দেলোয়ার হোসেন ছাত্রাবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার পর তিনি অন্যদের সঙ্গে সেনানিবাস থেকে বের হয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে এলাকার ছাত্র-যুবকদের নিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে ভারতের মনতলা ও শালবনে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে ২নং সেক্টরের অধীনে ৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হন। এ-সময় তিনি আখাউড়া, গঙ্গাসাগর, কসবা, কালাছড়া চা বাগান ইত্যাদি এলাকায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সাহসিকতার পরিচয় দেন। ২নং সেক্টরের অধীনে চন্দ্রপুর-লাতুমুড়ায় পাকবাহিনীর শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ বাহিনীর সহায়তায় এ ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ২২শে নভেম্বর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। দেলোয়ার হোসেন একই দলে ছিলেন। আক্রমণ পরিকল্পনা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এতে ভারতীয় কোম্পানি কমান্ডার ও ৩ জন জুনিয়র কমিশন অফিসারসহ ৪৫ জন এবং ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা এক পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে পশ্চাদপসরণ করেন। যৌথবাহিনী প্রথমে চন্দ্রপুর দখল করলেও পরবর্তীতে পাকিস্তানি বাহিনী চন্দ্রপুর পুনর্দখল করে। এ-যুদ্ধে দেলোয়ার হোসেন মারাত্মকভাবে আহত হন। শত্রুদের বোমার আঘাতে তাঁর এক হাত উড়ে যায়। আহত হয়েও তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে সহযোদ্ধারা তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে নিয়ে যান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নায়েক সুবেদার দেলোয়ার হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দেলোয়ার হোসেন সেনাবাহিনীর চাকরিতে পুনর্বহাল হন। সেনাবাহিনীর এডুকেশন কোরে নায়েক সুবেদার পদে পদোন্নতি লাভ করে ১৯৯৩ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ২০১০ সালের ১০ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রী শাহানা বেগম। এ দম্পতি ২ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক ও জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড