You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.16 | দুয়ারী ব্রিজ অপারেশন (মোহনপুর, রাজশাহী) - সংগ্রামের নোটবুক

দুয়ারী ব্রিজ অপারেশন (মোহনপুর, রাজশাহী)

দুয়ারী ব্রিজ অপারেশন (মোহনপুর, রাজশাহী) পরিচালিত হয় ১৬ই নভেম্বর। এতে ব্রিজটি ধ্বংস হয়ে যায়। রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার অন্তর্গত নওহাটা পৌরসভার পশ্চিমে দুয়ারী ব্রিজ অবস্থিত। ব্রিজটি পাহারা দেয়ার জন্য মহেদ আলী (সিন্দুরী), মো. উমর আলী (কাজিভাতুড়িয়া), মো. আ. হাকিম (বাদেজোল), আউব আলী (সিন্দুরী)-সহ ১৫-২০ জন রাজাকার সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত ছিল। নওহাটার কাছাকাছি গোপালপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প কমান্ডার ডাক্তার এমদাদুল, পিন্টু, মো. আজিজুর রহমান, ডা. শেখ মোহাম্মদ ইয়াছিন আলী (পিতা ইউনুছ আলী), নজরুল ইসলাম প্রমুখ দলবদ্ধ হয়ে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় রাজাকার ও পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। দুয়ারী ব্রিজে টহলরত রাজাকারদের অত্যাচারে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। তাই জব্বার (পিতা ঝড়ু দেওয়ান, বকপাড়া), বদর (পিতা মঙ্গল উদ্দিন, বেড়াবাড়ি), রাহাতুল্যা (বিদিরপুর), আ. মজিদ (পিতা দিদার বক্শ, সরনজাই), এডভোকেট হাবিবুর রহমান (গোদাগাড়ী), এডভোকেট শিষ মোহাম্মদ (সাঁওতাল, গোদাগাড়ী), মনসুর ( রায়পাড়া, রাজশাহী), হযরত আলী (শিল্লাপাড়া, নওহাটা), আবু সাঈদ (পিতা রজব আলী, বসন্ত কেদার), আলেফ মাস্টার (ষোলহাড়িয়া), নূর ইসলাম (হরিয়ান, কাঁটাখালী), মুঞ্জু (সৈয়দপুর, গোদাগাড়ী), নূর মাস্টার (সৈয়দপুর), সিরাজুল মৃধা (হরিয়ান) প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা দুয়ারী ব্রিজ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ব্রিজটি রেকি করে এসে কমান্ডারকে জানান যে, এর পূর্বদিকে রাজাকারদের একটি ক্যাম্প আছে। ক্যাম্পে কিছু পাকসেনাও থাকে। রাজাকাররা সব সময় ব্রিজটি পাহারা দেয়। ১৬ই নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে চান্দুড়িয়ার (তানোর) হারুন-অর-রশীদের নেতৃত্বে চারটি এক্সপ্লোসিভ বোমা ব্রিজে বসানো হয়। এর মধ্যে একটি বোমা হঠাৎ করে বিকট শব্দে ফেটে গেলে ব্রিজটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বোমা ফাটার সঙ্গে-সঙ্গে পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের আধুনিক অস্ত্রের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও এক পর্যায়ে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হন।
প্রথম অপারেশন সফল না হওয়ায় পুনরায় একই রাতে সফিকুর রহমান রাজার নেতৃত্বে রাত ৩টার দিকে ব্রিজটি আক্রমণ করা হয়। এবারে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের পশ্চিম পাশে পজিশন নেন এবং প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। হঠাৎ গুলির শব্দে রাজাকার ও পাকসেনারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। উপায়ান্তর না দেখে রাজাকাররা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে ব্রিজের কাছে গিয়ে ৪টি স্তম্ভের সঙ্গে ৪টি এক্সপ্লোসিভ বোমা বসিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। এরপর সংযোগ তার দিয়ে বিস্ফোরণের মাধ্যমে ব্রিজটি ধ্বংস করে দেয়া হয়।
রাতে গ্রামবাসী বোমা ফাটার আওয়াজ পেলেও কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। ভোর বেলায় তারা জানতে পারে যে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজটি ধ্বংস করে দিয়েছেন। এদিকে বেলা ১০টার দিকে পাকসেনারা গুলি করতে-করতে ব্রিজের নিকট আসে। সেখানে ঘণ্টা খানেক উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে না পেরে পাকসেনারা পিছু হটে। ফিরে যাওয়ার সময় তারা বাঘমারা ও চৌমারির আশপাশের ১৫০-২০০ ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। [আখতারুজ্জাহান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড