দুদলি যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা)
দুদলি যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ২৯শে সেপ্টেম্বর। এতে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
২৪শে সেপ্টেম্বর পিরোজপুর যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা আরো দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে দুদলি গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক এ স্থানটি ছিল কালীগঞ্জ থানার দক্ষিণাংশে অবস্থিত, পাশে শ্যামনগর থানা। মুক্তিযোদ্ধাদরে লক্ষ্য ছিল পাকহানাদার বাহিনীকে সর্বদা সন্ত্রস্ত করে রাখা। ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে পাকসেনারা শ্যামনগর আক্রমণ করবে এ তথ্য পেয়ে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য ক্যাপ্টেন এম নূরুল হুদার নির্দেশে শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের নেতৃত্বে শেখ নাসির উদ্দীন, আকবর হোসেন, আব্দুল হামিদ, আব্দুল হাকিম, আশরাফ আলী, মোকছেদ আলী, আলাউদ্দিন, লাকি, মুকুল, জাহিদ, মোকারম হোসেন, আতাহার রহমান ওরফে আতাউর, আব্দুল বারেক, ওজিহার রহমান, আব্দুল গফুর সরদার, আলী মোর্তজা, আকবর ওরফে বিল আকবর, রজব আলী, ফজর আলী, আইয়ুব আলী প্রমুখ ৫০-৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ঐদিন দুপুরে প্রচুর অস্ত্রসহ দুদলির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। উকসা বিওপি অতিক্রমণ করে বাগান ও ধানক্ষেত পার হয়ে রাত ৮টার দিকে তাঁরা দুদলি পৌঁছান এবং রাস্তার দুপাশে বাংকার খনন করে পজিশন নেন। রাত ১২টার দিকে বর্ষণমুখর ঘোরতর অন্ধকারে হঠাৎ শত্রুরা এসে উপস্থিত হয় এবং শুরু হয় আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ। প্রায় এক ঘণ্টা যুদ্ধের পর কেউ কাউকে পরাস্ত করতে না পেরে পাকসেনারা কৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাও করে ধরে ফেলার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা নেয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কড়া সতর্কতায় তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রাতভর চলে গোলাগুলি। ভোররাতে পাকবাহিনীর আরো সৈন্য এবং অস্ত্রের সমাবেশ ঘটে এবং তারা বেপরোয়া হয়ে কামান থেকে গোলা বর্ষণ করতে থাকে। এমতাবস্থায় অধিনায়ক শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা কভারিং ফায়ার করতে-করতে উক্ত এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। সকালে পাকসেনা, রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকেরা দুদলি গ্রামে ঢুকে ব্যাপক লুটপাট, মারধর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। দুদলি যুদ্ধের পর থেকে পাকসেনারা আর শ্যামনগর যাওয়ার চেষ্টা করেনি। এ-যুদ্ধে পাকসেনাদের হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে রজব আলী নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। [এম এম নজমুল হক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড