You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.17 | দরিয়াপুর ব্রিজ অপারেশন (গাইবান্ধা সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

দরিয়াপুর ব্রিজ অপারেশন (গাইবান্ধা সদর)

দরিয়াপুর ব্রিজ অপারেশন (গাইবান্ধা সদর) পরিচালিত হয় ১৭ই সেপ্টেম্বর রাতে। ১১নং সেক্টরের মাহাবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বাধীন কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের দরিয়াপুর ব্রিজ অপারেশনে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অপারেশন সফল হয় এবং পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজকারদের সঙ্গে যুদ্ধে এখানে ২০- ২৫ জন শত্রুসেনা হতাহত হয়।
গাইবান্ধা মহকুমা শহর থেকে সুন্দরগঞ্জ থানাসহ মহকুমার উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের দরিয়াপুর ব্রিজ ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী মাহাবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে প্রায় ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধা ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার শ্রীপুরে অবস্থান নেন। এ কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সবাই ছিলেন গাইবান্ধা মহকুমার। এ দলের সঙ্গে সাব-সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ্ খানের নির্দেশে দিনাজপুরের আরো একটি বড় মুক্তিযোদ্ধা দল যুক্ত হয়। এলাকার পথ দেখানোসহ এ অপারেশনে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন ছাপরহাটির রাজেন। পরিকল্পনামাফিক ১৭ই সেপ্টেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের কাছে গেলে দুই প্রান্তে পাহারারত পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজাকাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। এক সময় শত্রুপক্ষ বাংকার ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত দুপ্রান্তে ডিনামাইট বসিয়ে ব্রিজটি ধ্বংস করে দেন। বিকট শব্দে পুরো ব্রিজ নদীতে পড়ে যায়। সফল অভিযান শেষে নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার পথে ব্রিজ থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে মাঠেরহাটে রাজাকাররা অতর্কিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা গুলি চালান। এ-সময় সুন্দরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা রাজাসহ তিনজন আহত হন। দিনাজপুরের দলের ৮-১০ জন হতাহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা ছড়িয়ে- ছিটিয়ে পড়লেও ১৮ই সেপ্টেম্বর দিনের বেলায় আবার ছাপরহাটির রাজেনের বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাঁশঝাড়ে একত্রিত হন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্ত এলাকার ক্যাম্পে পাঠানো হয়। ১৯শে সেপ্টেম্বর পাকসেনারা ছাপরহাটির মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ঘিরে আবার গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে থাকায় থেমে- থেমে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলে। এখানে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হলেও পাকসেনাদের ২০-২৫ জন হতাহত হয়। এ পর্যায়ে বেশকিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এ অপারেশনে দরিয়াপুর ব্রিজ ধ্বংস হওয়ায় পাকিস্তানি হানাদারদের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। [জহুরুল কাইয়ুম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড