দাসপাড়া গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)
দাসপাড়া গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৬শে আগস্ট। এতে অনেক নারী-বৃদ্ধ-শিশুর প্রাণহানি ঘটে। কিশোরগঞ্জ জেলায় সংঘটিত ব্যাপক গণহত্যার এক নির্মম দৃষ্টান্ত দাসপাড়া গণহত্যা।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার পশ্চিম দিকের একটি গ্রাম দাসপাড়া। এ গ্রামে বসবাসকারীদের প্রায় সবাই ছিল জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। ইটনা থানার ছিলনী গ্রামের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম। তাঁর নেতৃত্বে ৮ই আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানা এবং সাচনা নৌ-বন্দর শত্রুমুক্ত হয়। এসব জায়গায় অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। সেখানে এক যুদ্ধে সিরাজুল ইসলামও শহীদ হন। তিনি ছাড়াও ইটনার অনেক মুক্তিযোদ্ধা কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এখান থেকে অনেক যুবক ও তরুণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ফলে এ এলাকার প্রতি পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের বিশেষ ক্ষোভ ছিল। তারা এ এলাকা থেকে কেউ যাতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মানুষের সহানুভূতি যাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার কৌশল গ্রহণ করে। এজন্য তারা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে তারা ইটনার দাসপাড়ায় আক্রমণ করে। দাসপাড়ার পাশে ছিল ডা. দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ি। তিনি ছিলেন একজন হোমিও চিকিৎসক। চিকিৎসক হিসেবে তিনি এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বিনা পয়সায় সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতেন। তাঁর কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধারাও সহায়তা পেতেন। পাকবাহিনী প্রথমে তাঁর বাড়িতে আক্রমণ করে। তাঁকে না পেয়ে তাঁর ঘরে আগুন দেয় এবং বাড়ির দুজন বৃদ্ধকে হত্যা করে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা দাসপাড়ায় নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রথমেই তাদের গুলিতে প্রাণ হারান যাদুমনি সাহা নামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পাকসেনাদের উন্মত্ত আচরণে ভীত-সন্ত্রস্ত দাসপাড়ার মানুষ চারদিকে পালাতে থাকে। পলায়নরত অবস্থায় অনেকে ধরা পড়ে। তাদের অনেকে ছিল নারী-বৃদ্ধ-শিশু। পাকসেনারা তাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে- খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর মৃতদেহগুলো হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়।
দাসপাড়ায় নিহতদের অনেকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলো- সুরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (পিতা বৈদ্যনাথ বর্মণ), হেমেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (পিতা বৈদ্যনাথ বর্মণ), মনমোহন বর্মণ (পিতা মহেন্দ্ৰ বৰ্মণ), মহেশ চন্দ্ৰ বর্মণ (পিতা হরাই চন্দ্র বর্মণ), মধুসূদন বর্মণ, মানদা বর্মণ (স্বামী লোকনাথ বর্মণ), দীনেশের মা (স্বামী কটু বর্মণ), প্রফুল্ল বর্মণ (পিতা জগৎ বর্মণ) ও যাদু মনি সাহা (পিতা দাগুরাম সাহা)। [মো. রওশন আলী রুশো]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড