দশমাইল যুদ্ধ (রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম)
দশমাইল যুদ্ধ (রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম) নভেম্বর মাসের শেষদিকে সংঘটিত হয়। এতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দশমাইল এলাকা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে নভেম্বর মাসের শেষদিকে এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোদালা চা বাগানে পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্প আক্রমণের কয়েকদিন পরই নভেম্বর মাসের শেষদিকে কমান্ডার সুবেদার ২টি এম আলী-র নেতৃত্বে কোদালা চা বাগানে অবস্থানরত কমান্ডার অশোক মিত্র কারবারী ও ডেপুটি কমান্ডার ইপিআর হাবিলদার আবদুল হামিদের গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে দশমাইল যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে মুক্তিবাহিনী-র কাছে খবর আসে যে, বান্দরবান থেকে ১টি বড় পাকিস্তানি আর্মি কন্টিনজেন্ট তাঁদের আক্রমণ করার জন্য বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা রাস্তা ধরে রাঙ্গুনিয়ায় আসছে। এ খবরে হাবিলদার আবদুল হামিদ ও পুলিশ আরমান আলীর নেতৃত্বে দুই প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা দ্রুত তৈরি হয়ে তাঁদের অবস্থান থেকে ৪-৫ মাইল সামনে গিয়ে বান্দরবান রাস্তার ওপর পদুয়ায় দশমাইল নামক স্থানে (বর্তমানে দশমাইল বাজার নামে পরিচিত) পাহাড়ের উঁচু জায়গায় সুবিধাজনক স্থানে এম্বুশ করেন। অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ফায়ার রেঞ্জের মধ্যে এলে মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি ও অন্যান্য অস্ত্রের সাহায্যে আক্রমণ শুরু করেন। পাকহানাদার বাহিনীও দ্রুত রাস্তার পাশে পজিশন নিয়ে তাঁদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় দুঘণ্টা স্থায়ী যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে তারা আহত সৈন্যদের নিয়ে পেছন দিকে পালিয়ে যায়। এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সফল যুদ্ধ। এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন- মো. ইসমাইল, বশির আহমদ, আরমান আলী, আবুদল জলিল, বজলুর রহমান, আখতার হোসেন, সুজাউদ্দিন, ছালামত উল্লাহ, আবদুস সামাদ, ফললুল হক, আবু তাহের, আবদুর রশিদ, মো. ইসমাইল হোসেন, দিদারুল আলম, জিনপদ বড়ুয়া, সুশান্ত বড়ুয়া, সুদত্ত বড়ুয়া, দেবপ্রিয় বড়ুয়া, নূরুল আলম, দুলু বড়ুয়া, শিবু বড়ুয়া, কাজল বড়ুয়া, অটল মুৎসুদ্দি প্রমুখ। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড