দত্তডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (মোল্লাহাট, বাগেরহাট)
দত্তডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (মোল্লাহাট, বাগেরহাট) পরিচালিত হয় ৩০শে সেপ্টেম্বর। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ক্যাম্পের রাজাকাররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
মোল্লাহাট থানা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে কোদালিয়া ইউনিয়নে দত্তডাঙ্গা গ্রামের অবস্থান। মওলানা মোসলেম উদ্দিন (কোদালিয়া) আগস্ট মাসের শেষদিকে খুলনা থেকে রাজাকারদের একটি দল নিয়ে দত্তডাঙ্গা গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি ভবানী বাবুর পরিত্যক্ত দালানে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা দালানের ভেতর বাংকার তৈরি করে নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যূহ মজবুত করে। ক্যাম্প স্থাপনের কিছুদিনের মধ্যে রাজাকাররা এলাকার মানুষের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নওয়াব আলীর বাড়িতে লুটতরাজ শেষে অগ্নিসংযোগ করে।
চিতলমারীর তাজুল বাহিনী-র অন্যতম কমান্ডার আনোয়ার হোসেন শিকদার (বড়বাড়িয়া) তখন ফ্লাইট সার্জেন্ট আজিজুর রহমান, নওশের আলী নশু, শান্তি রঞ্জন মণ্ডল, চানমিয়া, আব্দুর রব, আয়েন উদ্দিন মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন, রঞ্জন কুমার বিশ্বাসসহ ৩০-৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে দত্তডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্পের অদূরে পদ্মডাঙ্গা, মাছুয়ারকুল এবং কাটাদুরা গ্রামে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা দত্তডাঙ্গা ক্যাম্পের রাজাকারদের অত্যাচারের কথা শুনে এ ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য চিতলমারী ক্যাম্পের কমান্ডার সামসুল হক মল্লিক এবং চরকুলিয়ার শরীফ আবু তালেবের নেতৃত্বে দুটি মুক্তিযোদ্ধা দল তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৩০শে সেপ্টেম্বর রাতে দত্তডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। তাঁরা রাজাকার ক্যাম্পের দুদিকে পজিশন নিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। রাজাকাররা পাল্টা গুলি করতে থাকে। রাজাকারদের শক্ত প্রতিরোধের ফলে ক্যাম্প দখল করা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে তেরখাদা থানার পাতলা ক্যাম্প থেকে ক্যাপ্টেন ফহম উদ্দিনের নেতৃত্বে নুরুল হক মোল্লা ও সামসুল হকসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা এসে যোগ দিলে আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তৃতীয় দিনেও রাজাকারদের হটানো সম্ভব হয় না। এভাবে এক নাগাড়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ রাজাকারদের উদ্ধারের জন্য খুলনা থেকে পাকিস্তানি সেনাদল যে-কোনো সময় আসতে পারত। আর সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবেলা করার মতো অস্ত্র ও জনবল তখন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ছিল না। এ অবস্থায় এক পর্যায়ে দত্তডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার মওলানা মোসলেম উদ্দিনের বাড়ি থেকে তার স্ত্রীকে ধরে এনে জিম্মি করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামসুল হক মল্লিক রাজাকার মোসলেম উদ্দিনকে আত্মসমর্পণ করতে অথবা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষার প্রস্তাব দেন। সুযোগ পেয়ে সেদিন রাতে মোসলেম মওলানাসহ সব রাজাকার দত্তডাঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর মোল্লাহাট থানার আর কোনো গ্রামে রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপনের দুঃসাহস দেখায়নি। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড