দক্ষিণ গহিরা গণহত্যা (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম)
দক্ষিণ গহিরা গণহত্যা (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ১৪ই এপ্রিল। এতে একই পরিবারের ৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।
এদিন গভীর রাতে দক্ষিণ গহিরার সাগর উপকূলে মাইল্যার বাড়ি নামক হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বাড়িতে পাকবাহিনী নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। বঙ্গোসাগরের কুল ঘেঁষে কয়েকটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার এ গ্রামে বসবাস করত। এখানকার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এ পরিবারগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা মাস্টারদা সূর্যসেন ১৯৩৩ সালের ১৬ই মে পটিয়া উপজেলার ধলঘাটে ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পর তাঁর সহযোদ্ধা বিপ্লবীরা এ বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১৯শে মে ব্রিটিশ সৈন্যরা মাইল্যার বাড়িতে অভিযান চালালে বিপ্লবীদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধের পর থেকে একে-একে হিন্দু পরিবারগুলো গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। মাত্র ৩-৪টি পরিবার থেকে যায়। ১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল পাকবাহিনীর দোসররা এ বাড়িতে হানা দেয়। গভীর রাতে তারা মাইল্যার বাড়ির চিশতিয়া পরিবারের ওপর চড়াও হয়। পরিবারের সদস্যদের বেঁধে ঘরের মালামাল লুটে নেয়। হানাদাররা চিশতিয়ার এক বিবাহিত কন্যাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর একে-একে পরিবারের সদস্যদের কাঁথা মুড়িয়ে বেঁধে তাদের সঙ্গে থাকা টিনভর্তি কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৬ জন সদস্য। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান চিশতিয়া, ওমচরণ ধর, ষষ্ঠিচরণ ধর, আশা রানী ধর, হিমাংশু চরণ ধর ও সুনীল চরণ ধর। ফকির দোভাষ নামে যে লোকটি মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোদ্ধা বিপ্লবীদের ব্রিটিশ সৈন্যদের কাছে ধরিয়ে দেয় তারই দুই পুত্র জালাল চৌধুরী ওরফে জৌল্যা (আনোয়ারা থানার রাজাকার কমান্ডার) এবং নুরুল আনোয়ার চৌধুরী (চট্টগ্রাম জেলা পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক)-এর নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তাদের নেতৃত্বেই আনোয়ারা থানায় রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠিত হয়। বর্তমানে দক্ষিণ গহিরা গ্রামে একটি হিন্দু পরিবারও অবশিষ্ট নেই। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড