You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.06 | দক্ষিণ ফতেহপুর অপারেশন (রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

দক্ষিণ ফতেহপুর অপারেশন (রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর)

দক্ষিণ ফতেহপুর অপারেশন (রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর) পরিচালিত হয় ৬ই আগস্ট। এ-যুদ্ধের গাইড ছিলেন ফতেহপুরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এ বি এম আবদুল কুদ্দুছ। যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন নায়েক ফজলু মিয়া। তাঁকে সহযোগিতা করেন হাবিলদার সফিক (চাঁদপুর), নায়েক আবদুল মতিন পাটোয়ারী এবং মাছুমপুর-রামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল। এ-যুদ্ধে ১০-১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।
ঘটনার দিন রামগঞ্জ করপাড়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল এবং সুবেদার আলী আকবরের নিকট খবর আসে যে, রামগঞ্জ পাকবাহিনীর ঘাঁটি থেকে হানাদার বাহিনী লক্ষ্মীপুর সদরে যাবে। তাদের ওপর অপারেশন পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ঐদিন সকালে ৪টি নৌকাযোগে দাসপাড়ায় এসে পৌঁছান। সকাল ১১টায় শুরু হয় মুসল ধারে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির মধ্যেই একটি সাঁজোয়া যানে করে হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের টার্গেটস্থল ফতেহপুরের কাছাকাছি রথিজি মঠের নিকট এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পর আরো একটি জিপ এর পেছনে এসে যজুপুর রাস্তার মাথায় দাঁড়ায়। আরো একটি ট্রাক আবদুল হামিদ মিয়ার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। মুহূর্তের মধ্যে গর্জে ওঠে হাবিলদার সফিকের লাইট মেশিনগান ও অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ারগুলো। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে একদিকে ট্রাকের চাকা পাংচার হয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে যায়, অপরদিকে ট্রাকের ওপর থাকা কয়েকজন হানাদার তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী অক্ষত অবস্থায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করে নিরাপদে নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। তবে পাকিস্তানিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে পানপাড়া হাইস্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্র পার্শ্ববর্তী স্বর্ণকার বাড়ির আবদুল মতিন শহীদ হয়।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরবর্তীতে ওয়ারলেসের মাধ্যমে আরো সৈন্য আনে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা স্থান ত্যাগ করায় তারা তাদের মৃত সৈন্যদের ট্রাকে উঠিয়ে লক্ষ্মীপুর চলে যায়। যুদ্ধক্ষেত্রের অনতিদূরে আড়ালে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল হামিদ চৌকিদারের ভাষ্যমতে পাকসেনাদের লাশের সংখ্যা ১০-১৫টি হবে। এ-যুদ্ধের খবর ২-৩ দিন পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় এবং চরমপত্র- এ বিশেষ স্থান পায়। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানিদের চরম পরাজয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সফলতা পরবর্তী অভিযানে তাঁদের আরো সাহসী করে। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড