You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক তোবারক উল্লাহ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক তোবারক উল্লাহ

তোবারক উল্লাহ, বীর প্রতীক (১৯২৭-২০০৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৭ সালের ২রা জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার এখলাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
মতলব থানা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে এ গ্রাম। তাঁর পিতার নাম বসরত আলী মাস্টার এবং মাতার নাম রাবেয়া বেগম। তিনি চাঁদপুর গনি হাইস্কুল থেকে এন্ট্রাস এবং চাঁদপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। স্কুল ও কলেজে ছাত্র থাকাকালেই তিনি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। রাজনীতি-সচেতন এবং সাহসী ও দৃঢ় চরিত্রের অধীকারী তোবারক উল্লাহ কর্মজীবন শুরু করেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে কুষ্টিয়ায় দায়িত্বরত ছিলেন। দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নির্দেশ অনুযায়ী তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তোবারক উল্লাহ অন্য বাঙালি ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে তিনি ভারতে যান এবং সেখানে ৮ নম্বর সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত হন। এ সেক্টরের অধীনে তিনি বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। তোবারক উল্লাহ বালিয়াডাঙ্গা, হঠাৎগঞ্জ, বেনাপোল ইত্যাদি স্থানে সংঘটিত যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। একাধিক অপারেশনে তিনি নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্ব ও সাহসিকতার জন্য তাঁর সহযোদ্ধারা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। বেনাপোলে যুদ্ধরত অবস্থায় তোবারক উল্লাহ পাকসেনাদের দ্বারা ঘেরাও ও আটক হন। হানাদাররা তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় এবং তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসে। স্বাধীনতার পর তিনি মুক্তি পান।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তোবারক উল্লাহকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয় (গেজেট নম্বর ৪২০, খেতাবের সনদ নম্বর ১৭০)।
স্বাধীনতার পর তোবারক উল্লাহ বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এ যোগদান করেন। এর সদস্য হিসেবে তিনি ময়মনসিংহ ও ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে সুবেদার মেজর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালের ২৭শে নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৫ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আলফান নেসা। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড