ঝুমঝুমপুর প্রতিরোধযুদ্ধ (যশোর সদর)
ঝুমঝুমপুর প্রতিরোধযুদ্ধ (যশোর সদর) সংঘটিত হয় ২৮শে মার্চ, ২রা এপ্রিল ও ৩রা এপ্রিল। এতে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকবাহিনীর গণহত্যার খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৮শে মার্চ সন্ধ্যার পর কালিয়া থানার কলাবাড়িয়া গ্রামের খায়রুজ্জামান, শওকাত হোসেন দেলোয়ার হোসেন, মহসিন হোসাইন (কবি), জহুর মোল্যা, জব্বার মোল্যা, আজাদুজ্জামান, হানিফুজ্জামান, মুজিবুর রহমান মোল্যা, ছিয়াকুল মোল্যা, মোস্তাইন মোল্যা প্রমুখ যশোর সেনানিবাস আক্রমণের উদ্দেশ্যে লঞ্চে করে যাত্রা শুরু করেন। এ অভিযানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছুটিতে থাকা বাঙালি সিপাহি মনিরুজ্জামান মোল্যা, হিমায়েত তালুকদার, গোলাম মোস্তফা, দুলদুল শেখ, আবদুস সাত্তার ফকির, কাজী নোয়াব হোসেন, মকবুল হোসেন, মোহর ভূঁইয়া প্রমুখ অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করেন।
প্রতিরোধযোদ্ধারা যশোর সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর ইপিআর ক্যাম্পের কাছে পৌঁছলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন। পাকসেনারা প্রথমে পিছিয়ে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসে। এ-সময়ের মধ্যে প্রতিরোধযোদ্ধারা শহরের বিভিন্ন অংশ দখলে করে নেন। তাঁরা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট ভেঙ্গে কয়েদিদের মুক্ত করেন। এদিকে লোহাগড়া থানার ইপিসিপি (এমএল) নেতা শেখ সবুর ১০ জনের একটি নারীবাহিনী নিয়ে ঝুমঝুমপুরে এসে প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন। এ নারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন স্কুল-কলেজের ছাত্রী। তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করা এবং প্রয়োজনে শত্রুপক্ষের হামলা মোকাবেলা করা। তাদের সঙ্গে ছিলেন নড়াইলের এসডিও কামাল সিদ্দিকিসহ কালিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ, লোহাগড়ার আওয়ামী লীগ নেতা লে. মতিয়ুর রহমান, অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ মিয়া, শ ম আনোয়ারুজ্জামান এবং ইপিসিপি নেতা সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন, মমতাজউদ্দিন প্রমুখ।
পাকসেনারা শহরে ফিরে এলে প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। এ-সময় বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার হাসানউদ্দিন বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এক পর্যায়ে তিনি তাঁর দলের যোদ্ধাদের নিয়ে ঝুমঝুমপুর কলোনির কাছে কালিয়া ও লোহাগড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে তাঁরা নড়াইলের দিকে চলে যান। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও আনসার বাহিনীর সাবেক সদস্য লুৎফর রহমান (পাটকেলবাড়ি) শহীদ হন। তাঁকে কালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে কবর দেয়া হয়। ঝুমঝুমপুরে ২রা ও ৩রা এপ্রিলও যুদ্ধ হয়। এতে লোহাগড়া উপজেলার ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন বশির আহমদ বিশ্বাস (পাচুড়িয়া) ও আবুল কালাম আজাদ (কুমড়ি)। [মহসিন হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড