বীর বিক্রম জিল্লুর রহমান
জিল্লুর রহমান, বীর বিক্রম (১৯৪৪-১৯৭১) ল্যান্স নায়েক ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৪৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত শাহজাদপুর উপজেলার দরগাহপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম ফাতেমা বেগম এবং পিতার নাম হাবিবুর রহমান।
জিল্লুর রহমান ইপিআর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৬৩ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ৭১-এর ২৫শে মার্চ ইপিআর বাহিনীসহ বাঙালি সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য ও এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে গণহত্যায় মেতে উঠলে জিল্লুর রহমান এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। শুরুতে তিনি বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। পরে কমলগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে এম্বুশ, রেইড ও গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। এক পর্যায়ে তিনি ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হন এবং ‘জেড’ ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মেজর আমিনুল হকের নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কমলগঞ্জের ভানুগাছায় পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েক দিনব্যাপী যুদ্ধ হয়। শত্রুপক্ষের প্রচণ্ড আক্রমণে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা পিছু হটতে বাধ্য হন। কিন্তু জিল্লুর রহমান তার প্লাটুন নিয়ে বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে যুদ্ধরত অবস্থায় শত্রুর গুলিতে এ অকুতোভয় সৈনিক শহীদ হন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে জীবন উৎসর্গ করায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা জিলুর রহমানকে ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড