জুড়ী বাজার ভজির টিলা বাংকার অপারেশন (জুড়ী, মৌলভীবাজার)
জুড়ী বাজার ভজির টিলা বাংকার অপারেশন (জুড়ী, মৌলভীবাজার) পরিচালিত হয় জুলাই মাসের শেষের দিকে। এতে শত্রুপক্ষের দুটি ট্যাংক ধ্বংস এবং মর্টারের গোলায় বাংকার ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের গাইড কটুই মনা শহীদ হন।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার লাটিটিলা যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকসেনারা জুড়ীতে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করে। জুড়ী বাজারের অর্ধকিলোমিটার দক্ষিণে ভজির টিলায় নতুন প্রায় দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য ও এক স্কোয়াড্রন ট্যাংক তাদের সঙ্গে ছিল। ভজির টিলায় বিশাল তাবু টেনে তারা সৈন্যদের থাকার ব্যবস্থা করে। এখানে তারা অনেক বাংকার তৈরি করে। শামসু মিয়া ও কটুই মনা নামে দুজন বিশ্বস্ত গাইডের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা এ খবর পান। কুকিরতল সাবসেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের এ নতুন মোতায়েনকৃত সৈন্যদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। জুলাই মাসের শেষের দিকে আক্রমণ পরিচালিত হয়।
ইপিআর-এর নায়েব সুবেদার মতিউর রহমানকে সামনে রেখে আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অন্যান্য অস্ত্র ছাড়াও তখন কয়েকটি ৩ ইঞ্চি মর্টার ও কিছু ৩০ ইঞ্চি ভারী মেশিনগান ছিল। বাবু, খোকন, মাসুক, ফারুক প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে একাধিক কোম্পানি এ আক্রমণে অংশ নেয়। ফ্লাইট লে. কাদের ও মতিউর রহমানের ওপর এঁদের পূর্বে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে কুকিরতল সাবসেক্টরে ডিফেন্সে গান পজিশন স্থাপন করা হয়, যেখান থেকে ১ মাইল সামনে এগিয়ে অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়। তার বিছিয়ে দুটির মধ্যে কমিউনিকেশন লাইন স্থাপিত হয়। অবজারভারের দায়িত্ব ছিলেন একজন ক্যাপ্টেন। মর্টার ফায়ারের সঙ্গে-সঙ্গে বাবু ও খোকনের নেতৃত্বে দুটি কোম্পানিকে দুদিক থেকে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত করা হয়। মাসুক ও ফারুককে তৃতীয় কোম্পানি নিয়ে জুড়ী- কুলাউড়া সড়কে এম্বুশ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। পলায়নরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করতে এবং জুড়ী সাবসেক্টরের দিক থেকে সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্রমণ পরিচালিত হয়। প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলার আঘাতে শত্রুপক্ষের দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়। এরপর ৬টি মর্টারের গোলায় পাকসেনাদের বাংকারের তাবুতে আগুন লেগে যায়। মেশিনগান আর এলএমজি নিয়ে ফারুক ও বাবুর দল আক্রমণ চালায়। ভীত- সন্ত্রস্ত পাকসেনারা দৌড়াতে থাকে। এভাবে আক্রান্ত হয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তারা পরে আর জুড়ীতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেনি। এ আক্রমণের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গাইড কটুই মনা শহীদ হন। [হাসনাইন সাজ্জাদী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড