বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আধুনিক ভুটানের পিতা হিসেবে স্বীকৃত জিগমে দর্জি ওয়াংচুক
জিগমে দর্জি ওয়াংচুক, পদ্মবিভূষণ (১৯২৯-১৯৭২) আধুনিক ভুটানের পিতা হিসেবে স্বীকৃত, মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের অকৃতিম বন্ধু এবং বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ ভুটানের তৃতীয় রাজা।
জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ১৯২৯ সালের ২রা মে ট্রংসা জেলার থুয়েপাং রাজ প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাসাদেই তাঁর বাল্যশিক্ষা শুরু হয় এবং পরবর্তীকালে শিক্ষা লাভের জন্য তিনি ভারতের কালিম্পং শহরে গমন করেন। ভুটানের উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ১৯৫২ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা হিসেবে তাঁর অভিষেক হয়। দুদশকের রাজত্বকালে তাঁর শ্রেষ্ঠ অর্জনের মধ্যে জাতীয় পরিষদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভুটানের গণতন্ত্রায়ন, বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভুটানের যোগাযোগ স্থাপন, ভুটানের আধুনিকায়ন এবং ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন উল্লেখযোগ্য। সমাজসেবায় স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক ১৯৫৪ সালে তাঁকে ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯৭১ সালে ১২৫তম রাষ্ট্র হিসেবে ভুটান জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। তিনি ১৯৭২ সালের ২১শে জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ১৯৭৪ সালে জিগমে দর্জি ন্যাশনাল পার্ক নামে ভুটানে দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকালে রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ছিলেন বাংলাদেশের একজন অকৃতিম বন্ধু। অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে তিনি ও তাঁর দেশ বাংলাদেশের অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ভুটান ছিল বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম রাষ্ট্র (৩রা ডিসেম্বর)।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ জিগমে দর্জি ওয়াংচুক-কে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড