জিরি কাজির হাট যুদ্ধ (পটিয়া, চট্টগ্রাম)
জিরি কাজির হাট যুদ্ধ (পটিয়া, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২রা ডিসেম্বর। এতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন সাধারণ মানুষ শহীদ এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। অপরদিকে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।
জিরি ইউনিয়নের কাজির হাটে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করবে এ খবরের ভিত্তিতে ১লা ডিসেম্বর রাতে কমান্ডার শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপ কাজির হাটের পূর্বদিকে এবং কমান্ডার মহসিন খান গ্রুপ কাজির হাটের পশ্চিমে কাজিবাড়িতে এম্বুশ গ্রহণ করে। ২রা ডিসেম্বর ভোরে অধ্যাপক গৌরাঙ্গ প্রসাদ মিত্রের নেতৃত্বাধীন ১৫১ নম্বর গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ লোকমান জিরি এলাকার নিজবাড়ি থেকে আশিয়ায় তাঁদের ক্যাম্পে ফিরছিলেন। আশিয়ায় নূর বকসু মাঝির পুত্র আহমদ নবীর ঘর ও ঘরের সম্মুখস্থ ক্লাবঘরে ছিল এ ক্যাম্প। পথিমধ্যে কাজির হাটের পূর্বদিকে শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপকে এম্বুশ অবস্থায় দেখে সেখান থেকে একটু দূরে ধানক্ষেতে মোহাম্মদ লোকমানও এম্বুশ গ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিল একটি স্টেনগান।
ভেল্লাপাড়ায় পাকিস্তানি বাহিনী অবস্থান নিয়েছিল। রাতভর এম্বুশে থাকার পরও পাকিস্তানি সৈন্যদের আসতে না দেখে দিনের এক পর্যায়ে এম্বুশ প্রত্যাহার করে শাহজাহান ইসলামাবাদী তাঁর গ্রুপ নিয়ে বরমায় নিজেদের ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা লোকমান ধানক্ষেতে এম্বুশ অবস্থায় থেকে যান। এদিকে শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপ চলে যাওয়ার পর দুটি জিপে করে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারমুজাহিদরা জিরি কাজির হাটে আসে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এখানে জ্বালাও-পোড়াও ও গণহত্যা সংঘটিত করা। কিন্তু তারা হাটে আসতেই মহসিন খান গ্রুপ ও মোহাম্মদ লোকমানের আক্রমণের মুখে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারমুজাহিদরাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। প্রায় দুঘণ্টা তা স্থায়ী হয়। এদিকে কাজির হাটের পূর্বদিকে একা এম্বুশে থেকে মোহাম্মদ লোকমান যুদ্ধ চালিয়ে যান। কিন্তু তাঁর স্টেনগানের দুই ম্যাগাজিন গুলি শেষ হয়ে গেলে তিনি পুনরায় ম্যাগাজিনে গুলি ভরার আর সুযোগ পাননি। এ অবস্থায় পাকবাহিনীর গুলিতে তিনি শহীদ হন। এছাড়া মহসিন গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা পটিয়ার ছনহারা নিবাসী বদিউল আলম এবং জিরি এলাকার ধীরেন্দ্র লাল শীল, আবদুস সালাম ও ব্রজেন্দ্র লাল শীল নামে ৩ জন সাধারণ লোক এ-যুদ্ধে শহীদ হন। মহসিন গ্রুপের হাবিলদার আবু তাহের গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। অপরদিকে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।
জিরি কাজির হাট যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কমান্ডার মহসিন খান, তাঁর গ্রুপের বদিউল আলম (পিতা ওমতাজ মিয়া, ছনহারা), হাবিলদার হাফেজ আহমদ (জঙ্গলখাইন, পটিয়া), মোহাম্মদ ইলিয়াস (পেরলা), মোহাম্মদ ইসহাক (গৈড়লা), জবল আহমদ (তেকোটা), আবদুস সবুর (নাইখাইন), জহুরুল হক (নাইখাইন), হাবিলদার আবু তাহের (নাইখাইন), আবু তাহের চৌধুরী (জিরি), দীল মোহাম্মদ (জিরি), আলী আহমদ (হুলাইন), অধ্যাপক গৌরাঙ্গ প্রসাদ মিত্র গ্রুপের মোহাম্মদ লোকমান (পিতা মোহাম্মদ আমিন, জিরি) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড