বীর প্রতীক জামাল কবির
জামাল কবির, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন ফাল্গুনকড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সিরাজুল ইসলাম মজুমদার ও মাতার নাম শামসুন নাহার টুনি। ১৯৭১ সালে তিনি কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত ছিলেন।
৭০-এর নির্বাচনের পর দেশে চলমান অসহযোগ আন্দোলন-এ তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগদানের লক্ষ্যে তিনি ভারতের আগরতলায় যান। সেখানে ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ক্যাপ্টেন হায়দার তাঁকে ২নং সেক্টরের অধীন গেরিলা দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন। প্রশিক্ষণকালীন সময়ে তিনি আগরতলা থেকে কিশোরগঞ্জে এসে ক্যাপ্টেন হায়দারের বাবা, মা ও বোনকে (ডা. সেতারা বেগম, পরে ক্যাপ্টেন ও বীর প্রতীক) ভারতে নিয়ে যান। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে জামাল কবির প্রথম অপারেশন করেন কুমিল্লায়। পরবর্তী সময়ে তিনি নিয়মিত বাহিনী ‘কে’ ফোর্সে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে যুদ্ধ করেন।
প্রথম দিকে জামাল কবির কুমিল্লা ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের জন্য প্রশংসিত হন। পরবর্তীতে এ টি এম হায়দার তাঁকে ক্র্যাক প্লাটুন-এর সদস্য করেন। জুলাই মাসে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা কুমিল্লা শহরে যে ৮টি স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন, তার একটির নেতৃত্বে ছিলেন জামাল কবির। তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন বাহার উদ্দিন, সাকী চৌধুরী, তাহের ও খোকন। তাঁদের নির্ধারিত স্পট ছিল ছাতিপট্টি। এলাকাটি তখন পাকবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীন ছিল। অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে সাহসিকতার সঙ্গে তিনি সেখানে বোমা বিস্ফোরণে সক্ষম হন। হঠাৎ একযোগে পারিচালিত এতগুলো বোমা হামলায় সারা শহর কেঁপে ওঠে। লোকজন চারদিকে ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে। দু-তিন দিন শহর প্রায় জনশূন্য ছিল। এ অপারেশন কুমিল্লায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য ছিল এক বিরাট ঝাঁকুনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য জামাল কবিরকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শামীম আরা। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড