জয়রামপুর যুদ্ধ (মহম্মদপুর, মাগুরা)
জয়রামপুর যুদ্ধ (মহম্মদপুর, মাগুরা) ১৬ই অক্টোবর সংঘটিত হয়। এ-যুদ্ধে অর্ধশতাধিক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা আবির হোসেন শহীদ হন।
থানা সদর থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নহাটা ইউনিয়নের জয়রামপুরে ১৬ই অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী ও রজাকারদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। নড়াইল ও মাগুরা থেকে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য নবগঙ্গা নদী দিয়ে কার্গোযোগে জয়রামপুর পৌছায়। ঐদিন দুপুরের আগে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সিরাজ গ্রুপের একদল মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে উক্ত এলাকায় আগমন করে। পাকিস্তানি বাহিনীর আগমনের সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্মীদিয়া মসজিদের কাছে বড় রাস্তার ঢালে অবস্থান নেন। দক্ষিণে বিলমুখী রাস্তা বরাবর বোয়ালমারী গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান গ্রহণ করেন। পুরো দলের পেছনে ২ ইঞ্চি মর্টার নিয়ে বোয়ালমারী মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের ছোট একটি অংশ অবস্থান নেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব ছিল মূল আক্রমণ পরিচালনা করা আর বোয়ালমারী গ্রুপের দায়িত্ব ছিলো দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ হলে তা প্রতিহত করা এবং মূল দলকে সমর্থন দেয়া। রাজাকারদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের সংবাদ পেয়ে পাকিস্তানি বাহিনী দ্রুততার সঙ্গে বড় রাস্তা থেকে শুরু করে রাজা সীতারামের দিঘির দক্ষিণ পাড় পর্যন্ত অবস্থান নেয়। শুরু হয় জয়রামপুরের বিখ্যাত সম্মুখ যুদ্ধ। দুপুর থেকে রাত অবধি যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গোলাম ইয়াকুব যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। কাজী নূর মোস্তফা, নজির নায়েব, আব্দুর রশিদ, আতিয়ার, আবু সাঈদ, নজরুল, কুদ্দুস, পরিতোষ, রফিক, নজির মৃধা প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ের পাশাপাশি এক পর্যায়ে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানি বাহিনী সামনের দিকে এগুতে থাকে আর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের গুলি করতে থাকেন। এভাবে তাঁরা হানাদার বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখে দেয়ার চেষ্টা করেন। তাদের প্রতিরোধ করতে কমান্ডার গোলাম ইয়াকুব তাঁর এলএমজি দিয়ে পশ্চিম ও দক্ষিণ উভয় দিকেই শত্রুদের ওপর অবিরাম ব্রাশ ফায়ার করতে থাকেন। এ-যুদ্ধে তিনশতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ব্যারেলের তাপ লেগে তাঁর হাতে ও চোয়ালে ফোসকা পড়ে যায়। যুদ্ধে অর্ধশতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। কিশোর যোদ্ধা আবির হোসেন ক্রলিং করে রাস্তা পার হতে গিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মধ্যরাতে শাহাদত বরণ করেন। [সৈয়দ হাদিউজ্জামান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড