জমাদারপাড়া যুদ্ধ (দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়)
জমাদারপাড়া যুদ্ধ (দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে। এতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাকবাহিনীর দেয়া আগুনে ঘুমিয়ে থাকা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার শরীর ঝলসে যায়।
জমাদারপাড়া এলাকায় বেশকিছু দিন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গেরিলা দল পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করছিল। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে গেরিলা দলের কমান্ডার আব্দুল মালেক দেবীগঞ্জ থানা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরের দিন রাতে তাঁদের অপারেশনে যাওয়ার কথা। পার্শ্ববর্তী চাউলহাটি ইউনিটের হাইডআউটে থাকা গেরিলাদের কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার নিশ্চয়তা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আগের রাতের অপারেশন-ফেরত ক্লান্ত এবং অবসন্ন গেরিলা দলের অধিকাংশ সদস্য নিজস্ব হাইডআউটে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের দ্বারা আক্রান্ত হন। অবাঙালি রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনীর একটি দল ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আব্দুল মালেকের হাইডআউট লক্ষ করে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গেরিলা দলের মূল প্রতিরক্ষা স্থলে হানা দেয়। গেরিলা সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকার কারণে তাদের প্রতিরক্ষা বাংকারসমূহ সহজে পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এ অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে পাকসেনারা প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে এবং এক পর্যায়ে জমাদারপাড়া গ্রামে অবস্থিত আব্দুল মালেকের হাইডআউটে পৌঁছে যায়। গুলি এবং মর্টার শেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধাদের তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। পার্শ্ববর্তী ইউনিটের যে গেরিলা দলের রাতে দেবীগঞ্জ আক্রমণে কাভারেজ দেয়ার কথা, তাঁরা সহযোদ্ধাদের বিপদমুক্ত করতে এগিয়ে আসেন। পাকসেনাদের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পাকসেনারাও পাল্টা গোলাবর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের দল ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এগিয়ে যায়। এ অবস্থায় পাকবাহিনী এক গৃহস্থ বাড়িতে আব্দুল মালেকের হাইডআউটের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। টিনের ঘরটি দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। গেরিলা দলের মজুদকৃত গোলা-বারুদ আগুনের তাপে বিস্ফোরিত হয়। ফলে আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। আত্মগোপনকারী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার শরীর আগুনে ঝলসে যায়। দলের সাহসী যোদ্ধা আব্দুল মজিদের গুলিবিদ্ধ লাশ পাশের শস্যক্ষেতে পাওয়া যায়। কমান্ডার মালেক একটি কুয়োর ভেতর আত্মগোপন করলেও পাকসেনারা তাঁকে দেখে ফেলে এবং সেখানেই গুলি করে হত্যা করে। এ দুজন শহীদ যোদ্ধাকে গ্রামবাসী ও সহযোদ্ধারা জমাদারপাড়া গ্রামে সমাহিত করে। [শফিকুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড