জয়পুরহাট চিনিকল বধ্যভূমি (জয়পুরহাট সদর)
জয়পুরহাট চিনিকল বধ্যভূমি (জয়পুরহাট সদর) ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যতম বধ্যভূমি। ২৫শে এপ্রিল থেকে জয়পুরহাট হানাদারমুক্ত হওয়া (১৪ই ডিসেম্বর) পর্যন্ত এ বধ্যভূমিতে গণহত্যা চলে। তাই মোট কত লোককে হত্যা হয় তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা কঠিন। তবে এর সংখ্যা কয়েক হাজার হবে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলায় জয়পুরহাট সুগারমিল অবস্থিত। এটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ চিনিকল। অফিস, আবাসন, কারখানা ও খামার মিলে বিশাল আয়তনের প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থাপনার মতো পাকিস্তানি সৈন্যদের দখলে চলে যায়। ২৪শে এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী জয়পুরহাটে অনুপ্রবেশের পরপরই তারা জয়পুরহাট চিনিকলে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। জয়পুরহাটে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবিরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জয়পুরহাট চিনিকল। এ বধ্যভূমিতে স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম (কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত এবং বন্দি অবস্থায় ৩০শে আগস্ট ২০১৪ মৃত্যু) ও পাকিস্তানি সৈন্যদের কমান্ডার মেজর আফজাল নিয়মিত আসত এবং বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করত। এভাবে কাকে মেরে ফেলা হবে, কাকে ছেড়ে দেয়া হবে তা ঠিক করা হতো। মেজর আফজাল চিনিকলের গেস্ট হাউজে থাকত, অন্যত্রও তার অফিস ছিল। এখানে পাকিস্তানি মেজর আফজালের নেতৃত্বে পাকসেনারা একটি তথাকথিত বিচারালয় চালাত। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাঙালিদের ধরে এনে এখানে জিজ্ঞাসাবাদ করে মৃত্যুদণ্ড দিত এবং তা কার্যকর করত। এখানে বন্দি ২৭ জনের একটি দলে ছিলেন স্থানীয় কৃষক সমিতির নেতা সোলাইমান আলী ফকির (পাঁচবিবি উপজেলার মালঞ্চা গ্রাম)। তিনিসহ মোট ৪ জন বাদে বাকিদের হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রত্যেক দিন ২/১ জনকে এ বধ্যভূমিতে নিয়ে যেত, তারা আর ফিরে আসত না। মেজর আফজালের নেতৃত্বে জয়পুরহাট ও আশপাশের এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যাযজ্ঞ চালাত। জয়পুরহাট সুগারমিলের গণহত্যা ২৫শে এপ্রিল শুরু হয়ে তা জয়পুরহাট হানাদারমুক্ত হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। এখানের বন্দিরা ছিলেন জয়পুরহাট ও অন্যান্য জেলার। দীর্ঘ সময়ে চিনিকল বন্দিশিবির ও নির্যাতনকেন্দ্রে কতজনকে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক হিসাব নিরূপণ করা কঠিন। তবে এ বধ্যভূমিতে নিহতদের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে। [রেহানা পারভীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড