You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথপুর উপজেলা (সুনামগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথপুর উপজেলা (সুনামগঞ্জ)

জগন্নাথপুর উপজেলা (সুনামগঞ্জ) সুনামগঞ্জ জেলার পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব সীমান্ত জুড়ে ভারতের অবস্থান। মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এ জেলার সকল উপজেলাই মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল হাওর-বাওড়, খাল-বিল ও জলাশয়ে ভরপুর এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। রাজা বিজয় সিংহের স্মৃতিবিজড়িত জগন্নাথপুর উপজেলা একটি প্রাচীন জনপথ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামে এখানকার জনগণ ছিল অগ্রগামী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তারা অগ্রভাগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ শুনে জগন্নাথপুরের যুবকরা একটি সভার আয়োজন করে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২৫শে মার্চের পর একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- হারুনুর রশিদ ওরফে হিরন মিয়া (ইকড়ছই), মির্জা আব্দুস সাত্তার (ইকড়ছই), ব্যারিস্টার এম এ মতিন (ইকড়ছই), মির্জা মজলিস মিয়া (ইকড়ছই), সুধীর চন্দ্র গোপ (যাত্রাপাশা), বশির মিয়া (হবিবপুর), টনিক মিয়া (হবিবপুর), আবদুল হেকিম (হবিবপুর), আব্দুর রউফ চৌধুরী (কুবাজপুর), আব্দুল জব্বার (ভূরাখালি), আব্দুল মতিন (শ্রীধরপাশা), সিরাজুল ইসলাম (বালিকান্দি), মানিক কোরেশী (পাটলী), নুরুল ইসলাম (ঘোষগাঁও), মানিক পাল (জগন্নাথপুর), সাজ্জাদ হোসেন (ছিলিমপুর) প্রমুখ। উপজেলার প্রায় ৫০ জন যুবক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণের জন্য জগন্নাথপুর থানার ওসির নিকট যোগাযোগ করলে তিনি সাতটি রাইফেল দেন। সেগুলো দিয়ে আলখানাপাড় ও মমিনপুর হাওর এলাকায় তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুস সামাদ আজাদ- এমএনএ, আব্দুর রইস এমপিএ, ব্যারিস্টার এম এ মতিন প্রমুখ। আব্দুস সামাদ আজাদ দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অসামান্য অবদান রাখেন। আব্দুর রইসের প্রচেষ্টায় এ উপজেলায় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। তিনি হন এর সভাপতি এবং সহ- সভাপতি হন সুধীর চন্দ্র গোপ ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। এর সদস্য ছিলেন সৈয়দ ফখরুল ইসলাম, সৈয়দ খালিক মিয়া, বুলবুল আহমদ, বশির মিয়া, জব্বার মিয়া ও নুরুল ইসলাম। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দ আব্দুল হান্নান, সৈয়দ আতাউর রহমান, আবুল বাশার চৌধুরী, ব্যারিস্টার আব্দুল মতিন, ব্রজেন্দ্র কিশোর চৌধুরী, শিশির চৌধুরী প্রমুখ বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন অহিন্দ্র কুমার চৌধুরী পিনা (ভবানীপুর), মানিক বরণ পাল (জগন্নাথপুর), সাজ্জাদুর রহমান (ছিলিমপুর) এবং আব্দুল কাদির (হরিহরপুর)। ২৫শে মার্চের পর জগন্নাথপুরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।
জগন্নাথপুরে শান্তি কমিটি গঠন নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগীদের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। থানা মুসলিম লীগ সভাপতি আব্দুস সোবহান চৌধুরী ওরফে ছোবা মিয়া (হলদিপুর) প্রথমে শান্তি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে জগন্নাথপুর থানার ওসিকে নিয়ে পাকবাহিনীর মেজরের সঙ্গে দেখা করে তার পরামর্শক্রমে শান্তি কমিটি গঠন করে এবং সে হয় তার আহ্বায়ক। এর সদস্য ছিল তার ছেলে আব্দুল হান্নান চৌধুরী ওরফে সুফি মিয়া, তার মেয়ের জামাই সফিক চৌধুরী, শ্বশুর ফজলুর রহমান চৌধুরী, ভাগ্নে মানিক মিয়া প্রমুখ। তারা পাকবাহিনীকে জগন্নাথপুরে আসার আহ্বান জানায়। এতে বাধা দেয় হবিবপুর গ্রামের আছাব আলী ও ইকড়ছই গ্রামের গোলাম মোস্তফা। তারা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক হওয়ার জন্য তদবির শুরু করে। আছাব আলী পাকিস্তানি মেজরকে বুঝিয়ে নিজেই শান্তি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেয়। পরবর্তীতে আছাব আলী ও আব্দুস সোবহান চৌধুরী ছোবা মিয়া সিলেটে গিয়ে পাকিস্তানি মেজরের সঙ্গে বৈঠক করে পাকসেনাদের জগন্নাথপুরে আসতে রাজি করায়।
২৭শে আগস্ট শুক্রবার ভোরে প্রায় পাঁচশতাধিক পাকসেনা স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথপুরে আসে এবং হবিবপুরের রাজাকার এহিয়ার বাড়িতে ওঠে। সেখানে রাজাকারদের সঙ্গে বৈঠক করে তারা জগন্নাথপুর থানা আক্রমণের পরিকল্পনা করে। পরদিন ২৮শে আগস্ট সকালে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা জগন্নাথপুর থানায় প্রবেশ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা ছেড়ে চলে যান এবং জগন্নাথপুর উপজেলা হানাদারদের দখলে আসে। এদিনই পাকবাহিনীর সহযোগিতায় রাজাকাররা মির্জাবাড়িসহ জগন্নাথপুরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িতে লুটপাট চালায়। এমনকি লুটপাটের মালামাল নিলামে বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। পরদিন আবারো পাকবাহিনী মির্জাবাড়িতে হামলা চালিয়ে ৫টি ঘর ভাংচুর করে এবং সেখানে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় তারা লোকজনদের এ ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন করত। মজিদপুর গ্রামের বিপুল চন্দ্র দেবকে এখানে ধরে এনে আটক রাখা হয়। আব্দুস সোবহান চৌধুরী ছোবা মিয়া পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগী দালালদের তার বাড়িতে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করে। এর পরপরই তার ছেলে সুফি মিয়ার নেতৃত্বে দালালরা বেতাউকা গ্রামের অবনী চৌধুরীর বাড়ীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। নিরুপায় অবনী চৌধুরী পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে চলে যান। এ সুযোগে সুফি মিয়া অবনী চৌধুরীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পতি নিলামে বিক্রি করে এবং কিছু মালামাল তার নিজের বাড়িতে নিয়ে রাখে। পরবর্তীতে পিতা-পুত্রের প্ররোচনায় তাদের সহযোগী দালালরা যাত্রাপাশা গ্রামের ডাক্তার সুধীর গোপ, রাধাকান্ত গোপ, মহেন্দ্র গোপ ও গিরীন্দ্র গোপের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। এছাড়াও তারা দাস নোওয়াগাঁও, বেরী সালদিঘা ও চিলাউড়া গ্রামে হামলা এবং লুটপাট চালিয়ে গরু-ছাগল ও মালামাল লুট করে নিলামে বিক্রি করে। এ-সময় চিলাউড়া গ্রামের পাণ্ডব চন্দ্র দাসের কাছ থেকে পাঞ্জাবি সেনাদের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করা হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলায় দুটি গণহত্যা সংঘটিত হয়- শ্রীরামসি গণহত্যা ও রাণীগঞ্জ বাজার গণহত্যা। শ্রীরামসি গণহত্যা সংঘটিত হয় ৩১শে আগস্ট। এতে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। এরপর হানাদাররা শ্রীরামসি বাজারে গিয়ে কেরোসিন ছিটিয়ে সবকটি দোকানঘরে আগুন লাগিয়ে ভস্মীভূত করে এবং শ্রীরামসি গ্রামের এক নববধূসহ অনেক নারীকে নৌকায় তুলে নিয়ে যায়। জনমানবশূন্য গ্রামে লাশগুলো শেয়াল-কুকুরের খাদ্যে পরিণত হয়। চার-পাঁচদিন পর কয়েকজন লোক এসে অবশিষ্ট লাশগুলো একত্রে একটি গর্তে পুঁতে রাখে।
রাণীগঞ্জ বাজার গণহত্যা সংঘটিত হয় ১লা সেপ্টেম্বর। স্থানীয় দালাল ও পাকবাহিনীর হাতে এদিন দেড় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। গণহত্যার পর হানাদাররা রানীগঞ্জ বাজারে অগ্নিসংযোগ করলে ১২৮টি দোকানঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিসংযোগের পূর্বে বাজার জুড়ে চলে লুটপাটের মহোৎসব।
পাকবাহিনী জগন্নাথপুর বাজারেও একটি গণহত্যা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। এজন্য তারা দুশতাধিক ব্যবসায়ীকে নলজুর নদীর তীরে নিয়ে হাত বেঁধে লাইনে দাঁড়ও করায়। কিন্তু যে-কোনো কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত গণহত্যাটি সংঘটিত হয়নি। তবে পাকবাহিনী জগন্নাথপুর বাজারের ব্যবসায়ী ধরণী রঞ্জন দেব, সুধীর চন্দ্র রায়, বিনয় ভূষণ বনিক, রামকুমার রায়, পঙ্কজ কুমার রায়, রামহরি রায় ও রাধাবিনোদ রায়ের দোকানে লুটপাট চালায়। জগন্নাথপুর বাজারের পাশে অবস্থিত মির্জাবাড়িতে লুটপাট করে ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি মির্জা আব্দুল খালেক বাদি হয়ে জগন্নাথপুর থানায় পাকিস্তানি মেজর ও স্থানীয় রাজাকারদের বিরুদ্ধে এক লাখ এগারো হাজার তিনশত টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা করেন।
উপজেলায় শ্রীরামসিতে একটি গণকবর রয়েছে। ৩১শে আগস্ট শ্রীরামসি গণহত্যায় শহীদদের এখানে কবর দেয়া হয়। উপজেলার মির্জাবাড়িতে কিছুদিন পাকবাহিনীর বন্দিশিবির ও নির্যাতনকেন্দ্র ছিল।
আসামাপুর গ্রামের আশাদ মিয়া চেয়ারম্যানের বাড়িতে পাকসেনা ও রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এ খবর জানতে পেরে ক্যাম্পে আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নেন। তার আগে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদিরকে ছদ্মবেশে পাঠিয়ে হানাদারদের ঘাঁটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা পদ্ধতিতে হামলা চালিয়ে পাকসেনা ও রাজাকারদের বিতাড়িত করেন। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা একদিন জগন্নাথপুর উপজেলা থেকে বেতাউকা হয়ে দিরাই যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় এক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে তার বাড়িতে তাঁদের দাওয়াত খাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তার কথায় রাজি না হয়ে চলে যান। এরপর ঐ রাজাকার পাকবাহিনীকে খবর দিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা ঐ পথ দিয়ে ফেরার সময় সে আবার তাঁদের অনুরোধ করে। এবার মুক্তিযোদ্ধারা তার বাড়িতে উঠতে রাজি হন। মনিরউদ্দিন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা তার বাড়ির দিকে অগ্রসর হওয়ামাত্র পাকসেনারা তাঁর ওপর হামলা চালায় এবং তাঁকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। অন্য মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত সরে পড়তে সক্ষম হন।
৮ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সৈয়দপুর থেকে একজন রাজাকারকে ধরে আনেন। সে বঁচার জন্য পাকসেনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দেয়। তার দেয়া তথ্যমতে পাকসেনারা ৯ই নভেম্বর মীরপুরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। এ খবর আগে থেকেই জানতে পেরে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। ঘটনার দিন সকালে পাকসেনারা গুলি ছুড়তে-ছুড়তে মীরপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিউত্তরে কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকেন। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্তে আসার সঙ্গে-সঙ্গে তাঁদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। পাকসেনারা টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়।
১০ই নভেম্বর পাকসেনারা আবারো আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় যুদ্ধ চালিয়ে ভবেরবাজার পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং দিরাই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সহযোগিতা কামনা করেন। পরদিন ১১ই নভেম্বর ভোরবেলা পাকবাহিনী প্রস্তুতি নেয়ার আগেই মুক্তিযোদ্ধারা দুদিক থেকে আক্রমণ চালালে পাকসেনারা পিছু হটতে থাকে। এ-সময় পাকসেনাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মনফর উল্যা নামে একজন কৃষক নিহত হন। পরে হানাদারদের প্রতি আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে অর্ধশতাধিক রাজাকারসহ এক পাকিস্তানি দারোগা আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার সর্বত্র পাহারা বসান, যাতে পাকবাহিনী আর জগন্নাথপুরে ঢুকতে না পারে। দেশ স্বাধীনের পরপর মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় রাজাকারদের ধরে এনে উপজেলা পরিষদে বন্দি করে রাখেন। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সুপারিশে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় ৷ ৯ই ডিসেম্বর মীরপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে এক যুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলায় ৬ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন- গিয়াস উদ্দিন (পিতা রফিক উদ্দিন, শ্রীধরপাশা; ১৪ই অক্টোবর পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ে শহীদ), মনির উদ্দিন (পিতা আব্দুল রশিদ, গড়গড়ি; বেতাউকা হলদিপুর যুদ্ধে শহীদ), আছকির মিয়া (পিতা দুলা মিয়া, হরিহরপুর), কালা মিয়া (পিতা আনছার উল্যাহ, রৌয়াইল), জয়নাল আবেদীন (পিতা লস্কর মাহমুদ, জয়নগর) এবং মকদ্দুছ আলী (পিতা বন্দে আলী, শ্যামার গাঁও)।
এছাড়া ১৩ জন আহত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাঁরা হলেন- আব্দুল কাইয়ুম (পিতা সাহিদ উল্যাহ, জয়নগর), ফটিক উল্যাহ (পিতা ফয়েজ উল্যাহ, জয়নগর), ধীরেন্দ্র কুমার দে (পিতা দিনেশ কুমার দে, মোল্লারগাঁও), শহীদ আলী (পিতা ওয়াহিদ উল্যাহ, বালিকান্দি), আব্দুল কাদির (পিতা আব্দুর রশিদ মুন্সী, হরিহরপুর), আব্দুল হাফিজ (পিতা হাজি সাজিদ উল্যাহ, ভূরাখালি), আব্দুল হক (পিতা আজর আলী, ভূরাখালি), আব্দুল মানিক (পিতা আছমত উল্যাহ, ভূরাখালি), আকবর আলী (পিতা সুনাফর আলী, খাগাউড়া), আব্দুল্লাহ খান (পিতা রসময় তালুকদার, ইসলামপুর), রাশিদ আলী (পিতা হুসেন আলী, দোস্তপুর), ক্বারী নাছির উদ্দিন (পিতা ছমরু মিয়া, বাগময়না) এবং আছমত আলী (পিতা আমতর আলী, ইকড়ছই)।
শ্রীরামসি গণহত্যায় শহীদের স্মরণে ১৯৮৬ সালে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে শহীদের নাম- পরিচয় লেখা আছে। ১৯৮৭ সালে শ্রীরামসি গ্রামবাসী শহীদ স্মৃতি সংসদ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করে। রানীগঞ্জ বাজার গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে ১৯৮৭ সালে রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে ৩৪ জন শহীদ ও ৩ জন আহতের নাম লেখা রয়েছে। [অমিত দেব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড