ছাব্বিশা যুদ্ধ (ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল)
ছাব্বিশা যুদ্ধ (ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১৭ই নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ছাব্বিশা গ্রামে। এদিন সকালে সিরাজগঞ্জ থেকে দুটি লঞ্চযোগে শতাধিক পাকসেনা যমুনা নদী পার হয়ে গাবসারার কালিপুর ঘাটে নামে। এ সংবাদ শুনে কালিগঞ্জে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পূর্বদিকে সরে এসে হানাদারদের প্রতিরোধ করার জন্য ছাব্বিশায় অবস্থান নেয়।
এদিকে পাকবাহিনী কালিপুর ঘাটে নেমে দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। একটি গ্রুপ গোবিন্দাসী-শালদাইর হয়ে ছাব্বিশার পশ্চিম পাশে শালদাইর ব্রিজের নিকট অবস্থান নেয়। অপর গ্রুপটি কালিপুর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে কালিগঞ্জ- জিগাতলা-বাগবাড়ি-খুপিবাড়ি হয়ে ছাব্বিশার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা ছাব্বিশার পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছলেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। উভয় পক্ষে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে না পেরে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ-কেউ বিরামদী হয়ে শিয়ালকোল দিয়ে ঘাটাইলের দিকে, অন্যরা অলোয়া হয়ে নিকলা বিল সাঁতরে খরকের দিকে চলে যান। এরপর পাকবাহিনী গ্রামটিতে গণহত্যা চালিয়ে ৩২ জন নারী- পুরুষকে হত্যা করে।
ছাব্বিশার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কয়েড়ার আজিজুর রহমান, মতিয়ার রহমান, আমিনুল ইসলাম, আবদুল বাছেদ, খরকের রেজাউল করিম (চান মিয়া), আমুলার আব্দুল হামিদ, ফলদার ইনছান আলী, হাবিবুর রহমান, মহির উদ্দিন, জুলহাস উদ্দিন, বাহাদুরটোকনার আবদুস সালাম, পাটিতাপাড়ার শাহজাহান, শিয়ালকোলের আবদুল বারী তালুকদার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এ-যুদ্ধে কয়েড়ার আমিনুল ইসলাম, কোনাবাড়ির আবদুল বাছেদ মণ্ডল ও আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের গুলিতে আহত হন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড