চুলকাঠি যুদ্ধ (বাগেরহাট সদর)
চুলকাঠি যুদ্ধ (বাগেরহাট সদর) সংঘটিত হয় ১২ই অক্টোবর। রাজাকারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে উভয় পক্ষে বেশ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মংলা বন্দর আক্রমণকারী নৌকমান্ডোদের ৯ই অক্টোবরের অপারেশনের নিরাপত্তার জন্য ৯নং হেডকোয়ার্টার্স থেকে শেখ আফজাল হোসেন, খিজির আলী তরফদার (পরে বীর বিক্রম) এবং মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ মুক্তিযোদ্ধার একটি দল পাঠানো হয়। সেপ্টেম্বর মাসের শেষার্ধ থেকে দলটি দাকোপ থানার কৈলাসগঞ্জে অবস্থান করে। কয়েকদিন পর এখান থেকে প্রায় ১০০ মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন ও আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে রামপাল থানার কালেখাঁরবেড় গ্রামে এসে অবস্থান নেন। দলগুলোর প্রতি নির্দেশ ছিল মংলা অভিযান সম্পন্ন হওয়ার পরপর তাঁরা যেন ভারতে অবস্থিত টাকি ক্যাম্পে ফিরে যান। ৯ই অক্টোবর মংলা পোর্ট অভিযান সফলভাবে সমাপ্ত হওয়ার পর ১০ই অক্টোবর আনোয়ার হোসেন একটি দল নিয়ে চুলকাঠি ও ফকিরহাট হয়ে ভারতে যান। পরদিন ১১ই অক্টোবর আফজাল হোসেন তাঁর দল নিয়ে একইভাবে ভারতে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চুলকাঠি বাজারে আসেন এবং নিকটবর্তী চুলকাঠি-ঘনশ্যামপুর হাইস্কুলে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবস্থানের খবর বাগেরহাট রাজাকার ক্যাম্পে পৌঁছলে ১২ই অক্টোবর বাগেরহাট থেকে রাজাকারদের বিশাল একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। রাজাকাররা স্কুলের সব ভবন ঘিরে ফেলে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা-আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র গুলি বিনিময় হয়। উভয় পক্ষে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আফজাল হোসেন বিজ্ঞান ভবন থেকে রাজাকারদের লক্ষ করে দুই ইঞ্চি মর্টার নিক্ষেপ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলী (ঝনঝনিয়া) এবং হরিদাস (মাসকাটা) বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন। কমান্ডার আফজাল হোসেন, শশাংক দেবনাথ, সুনীল, লক্ষ্মীকান্ত, রাজ্জাক, অরুণ ডাক্তার প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। আহত হওয়া সত্ত্বেও আফজাল হোসেন তাঁর মর্টার আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। তাতে রাজাকার বাহিনীর বেশ কয়েকজন হতাহত হওয়ায় এক পর্যায়ে তারা পশ্চাদপসরণ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারাও ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আফজাল হোসেন তাঁর কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ভারতে যান। অন্যদিকে শশাংক দেবনাথের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা চিরুলিয়া বিষ্ণুপুরে গিয়ে রফিকুল ইসলামের দলে যোগ দেন। চুলকাঠি যুদ্ধ স্মরণে শহীদদের নামাঙ্কিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [স্বরোচিষ সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড