মুুক্তিযুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ ও এর নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১-এর ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন-এর ডাক দেন। পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য স্থানের মানুষের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীও অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ এরপর প্রতিদিন এখানকার ছাত্রসমাজ ‘জয় বাংলা’, ‘তোমার আমার ঠিকানা – পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘তুমি কে – আমি কে বাঙালি বাঙালি’ ইত্যাদি স্লোগানসহ মিছিল করে মহকুমার সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ট্রেন, বাস সবকিছু বন্ধ করে দেয়। দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল ছাত্র সংসদের সহ- সভাপতি মোহাম্মদ কামাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গোলাম নবী সাটু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লোকমান হোসেন মানিক, মহম্মদ আলী কামাল, নুরুন্নবী অপু, তরিকুল আলম চৌধুরী, মনিম-উদ- দৌলা চৌধুরীসহ অনেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে আওয়ামী লীগের মহকুমা অফিসে সভা করেন। তাঁরা বিভিন্ন কমিটি করে এক-একজন ছাত্রনেতাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার দায়িত্ব প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ- সরাসরি রেডিও-টিভিতে প্রচারিত না হওয়ায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এদিন তীব্র উৎকণ্ঠার মধ্যে অতিবাহিত করেন। পরদিন রেকর্ডকৃত ভাষণ শুনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্রনেতারা শহরে মিছিল বের করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার কৌশল নির্ধারণের জন্য বৈঠকে বসেন। সেরাজুল হক শনি মিয়া, ফজলুর রহমান মোক্তার, ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার), একরামুল হক, সুলতানুল ইসলাম মনি, রইস উদ্দিন আহমেদ, হামিদুর রহমান হেনাসহ অন্যান্য নেতা অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে ছাত্রনেতারা গ্রাম পর্যায়ে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছাত্রলীগ নেতা মইনুদ্দীন মণ্ডলের নেতৃত্বে ছাত্রনেতারা প্রতিদিন মাথায় লালফিতা বেঁধে ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করেন। ছাত্রদের আরেকটি গ্রুপ গোলাম নবী সাটু, শরিফুল ইসলাম ইবু প্রমুখের নেতৃত্বে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন এলাকার ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। ছাত্র ইউনিয়ন- নেতা শফিকুল আলম ভোতা ও ইসরাইল সেন্টু অনেক ছাত্র-যুবককে একত্রিত করে হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে পিটি প্যারেড শুরু করান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬ই মার্চ পর্যন্ত একটানা সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলাকালে মহকুমার প্রতিটি থানা শহর কার্যত অচল ছিল। তখন রাস্তায় কোনো যানবাহন চলেনি, দোকানপাট-ব্যাংক বন্ধ ছিল, কোনো সরকারি অফিস খোলেনি, কর্মচারীরা অফিসের ধারে-কাছেও যাননি। সারা শহরে কেবল ছাত্র-জনতার মিছিল চলে। অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টম দিনও চাঁপাইনবাবগঞ্জে হরতাল পালিত হয়। ঘরে-ঘরে কালো পতাকা ওড়ানো হয়। অধিকাংশ মানুষ সেদিন কালো ব্যাজ ধারণ করে। অসহযোগ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১২ই মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ঢাকার পল্টনে ৩রা মার্চ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্র গোলাম নবী সাটু উপস্থিত ছিলেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে স্থানীয় ছাত্রনেতাদের বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তিনিই পতাকা তৈরির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হীতেন্দ্রনাথ সাহার সহযোগিতায় তিনি সাদা কাগজে রং দিয়ে পতাকা তৈরি করেন। কিন্তু কাপড় দিয়ে পতাকা তৈরির লোক পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে মসজিদপাড়ার দাসু খলিফা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে তা বানাতে সম্মত হন ৷ দোকানে জনসমক্ষে দিনেরবেলা পতাকা তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ চিন্তা করে রাতে দাসু খলিফা সেটি তৈরি করেন। সবুজ জমিনের মাঝে উদীয়মান লাল সূর্য, তার মধ্যে হলুদ রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র-সম্বলিত পতাকা তৈরি হয়। ১২ই মার্চ সকাল ১১টায় ছাত্রনেতা গোলাম নবী সাটু আওয়ামী লীগ অফিসে সবার উপস্থিতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
২২শে মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা পার্কে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের জন্য গণআন্দোলনে অংশ নিয়ে যাঁরা সামরিক বাহিনীর গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারীদের অনেকে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেত্রী লাইজু এবং খুলনার শিরিন নারীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার জন্য এখানে বেশকিছু সভায় বক্তৃতা করেন। সেরাজুল হক শনি মিয়ার বাড়ি, রুকু মিয়ার বাড়ি এবং আওয়ামী লীগ অফিসে অনুষ্ঠিত এসব সভায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। ডা. রহমত আলীর স্ত্রী, মনিমিয়ার স্ত্রী এবং স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
পুরো অসহযোগ আন্দোলনের সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছিল এক বিক্ষুব্ধ জনপদ। আন্দোলন-মিছিলে উচ্চারিত জনতার কণ্ঠস্বর এক অভাবনীয় ঐকতান রচনা করে। মিছিলে মুখরিত শহরের মহল্লায়-মহল্লায় মানুষের ঐক্য গড়ে উঠেছিল। এ আন্দোলনের সময় সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সক্রিয় ছাত্রনেতাদের নামের তালিকা তৈরি করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ ও ইপিআর-এর অনেক সদস্য স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে থাকায় এ গোপন তালিকার খবর ছাত্রনেতাদের কাছে পৌঁছে যায়। ফলে ২৫শে মার্চ গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সময় ছাত্রনেতারা গ্রেফতার এড়িয়ে গা ঢাকা দিতে সক্ষম হন।
জামায়াতে ইসলামী- ও মুসলিম লীগ- বাদে অন্য সকল দল নিয়ে ২৭শে মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক সর্বসম্মতিক্রমে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। পরিষদের সদস্য ছিলেন রইস উদ্দিন আহমেদ এমএনএ, মো. খালেদ আলী মিয়া এমএনএ, সেরাজুল হক শনি মিয়া, এডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, এডভোকেট ওসমান গনি, এডভোকেট হামিদুর রহমান হেনা, অধ্যাপক নওয়াব আলী, অধ্যাপক এনামুল হক, আহমদ উল্লাহ চৌধুরী, এডভোকেট সুলতানুল ইসলাম মনি, এডভোকেট একরামুল হক, আবদুর রহমান প্রমুখ। সংগ্রাম পরিষদ অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ, আনসার, ইপিআর ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটি যৌথ বাহিনী গঠন করে। নওগাঁ ইপিআর-এর ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী যৌথ বাহিনী পরিচালনা করেন। কয়েক দিনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংগ্রাম পরিষদ প্রায় এক হাজার সদস্যের একটি বাহিনীতে পরিণত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে স্থানীয় ছাত্রদের নিয়ে গঠিত সংগ্রাম পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মইনুদ্দীন মণ্ডল ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি। তাঁর নেতৃত্বে ছাত্র-যুবকরা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়। তাঁর অধীনে গঠিত একটি স্কোয়াডের প্রধান কাজ ছিল মাথায় লালফিতা বেঁধে এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ছাত্রদের উৎসাহিত করা। অপর একটি গ্রুপ গোলাম নবী সাটু ও শরিফুল ইসলাম ইবুর নেতৃত্বে গোপনে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করে।
নবাবগঞ্জ হরিমোহন হাইস্কুল ও কলেজ মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানা থেকে রাইফল নিয়ে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রশিক্ষণ পরিচালনায় সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন গোলাম নবী সাটু, মোহাম্মদ আলী কামাল, মইনুদ্দীন মণ্ডল, এডভোকেট একরামুল হক, এডভোকেট নজরুল ইসলাম, এডভোকেট সুলতানুল ইসলাম মনি, সিরাজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ইবু, মনিম-উদ-দৌলা চৌধুরী, রোজিউর রহমান বিশু, লুকা, এজাবুল, টোকন, লোকমান হোসেন, শেখ হাফিজুর রহমান, আব্দুল মান্নান সেন্টু প্রমুখ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাথমিক প্রতিরোধযুদ্ধ হয় ইপিআর-এর বাঙালি ও অবাঙালি সদস্যদের মধ্যে। ২৫শে মার্চ বিকেলে ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স থেকে ১৫-১৬ জন অবাঙালি ইপিআর সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসে। অবাঙালি কর্মকর্তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ ৬নং উইং-এর বাঙালি ইপিআর সদস্যদের অস্ত্র জমা নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পাকিস্তানিদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তাঁরা অস্ত্র জমা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে ২৬শে মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের সমস্ত বাঙালি ইপিআর সদস্যকে নিরস্ত্র অবস্থায় ‘ফল-ইন’ করানো হয়। কিন্তু কিছু বাঙালি ইপিআর সদস্য বিপদের আশংকা করতে পেরে অস্ত্রসহ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থান নেন। সেদিন দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পে ওয়ারলেসে খবর আসে যে, ঢাকায় বাঙালি ইপিআর সদস্যদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এ সংবাদ পেয়ে বাইরে অবস্থানরত বাঙালি ইপিআর সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে সতর্ক ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে বাঙালি ও অবাঙালি সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলির মধ্যে অবাঙালি ৩ জন অফিসার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজশাহীর দিকে পালিয়ে যায়। প্রায় ২ ঘণ্টা গোলাগুলির পর পরিস্থিতি বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণে আসে। পাকিস্তানি জেসিও- কে বন্দি করা হয়। অস্ত্র ও গোলা-বারুদসহ ক্যাম্পকে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের অধীনে নেয়ার পর ইপিআর সদস্যরা বাইরে ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের খবর দেন। ১৫ মিনিটের মধ্যে শহরের আশপাশ থেকে ৩ হাজার লোক ইপিআর-এর বাঙালিদের সাহায্য করার জন্য ক্যাম্পে আসে। বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে সেদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থানরত বেশকিছু অবাঙালি ইপিআর সদস্য নিহত হয়।
২৭শে মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরকে অবাঙালি ইপিআর সদস্যদের হাত থেকে রক্ষা করতে যাঁরা ক্যাম্পে ছুটে যান, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আনসার ও মুজাহিদ অপরিসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। তাঁরা হচ্ছেন- আনিসুর রহমান (পোলাডাঙা), ফলতান (মসজিদপাড়া), আনসার এম (মসজিদপাড়া), সফিকুল ইসলাম (পোলাডাঙ্গা), খাইরুজ্জামান (নবাবগঞ্জ সদর), সফিকুল ইসলাম (নবাবগঞ্জ সদর), আনসার সোনা (ফতেপুর), বসির আলী, আনসার আলী (ফতেপুর), নবুয়াত আলী (আজাইপুর), মুজাহিদ কিনু (মসজিদপাড়া), মুজাহিদ ইলিয়াস (শংকরবাটি), মুজাহিদ কাইউম (মসজিদপাড়া), মুজাহিদ মোহাম্মদ (মসজিদপাড়া), মুজাহিদ তুফান (বটতলা হাট) প্রমুখ।
৭ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুটি সাব-সেক্টর মেহেদিপুর সাব-সেক্টর ও দলদলি সাব-সেক্টর। মেহেদিপুর সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ (পরে শহীদ)। দলদলি সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন লে. রফিকুল ইসলাম। দুটি সাব-সেক্টরই ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলার বাইরে। কিন্তু শহর দখলের মূল যুদ্ধে উভয় সাব-সেক্টরের কমান্ডার তাঁদের বাহিনী নিয়ে এ উপজেলায় অবস্থান করেন। শহর দখলের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। লে. কাইউম এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মহানন্দা নদী অতিক্রম করে শহরের দিকে অগ্রসর হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলায় ইনডাকশন পার্টির (গণবাহিনী) দলনায়ক ছিলেন শেখ মো. হাফিজুল ইসলাম। ছাত্রনেতাদের মধ্যে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মইনুদ্দীন মণ্ডল, গোলাম নবী সাটু ও মোহাম্মদ আলী কামাল। . মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে স্থানীয় কয়েকজন সংগঠকের নেতৃত্বে এখানে বিশেষ-বিশেষ বাহিনী গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)-এর অন্যতম নেতা মইনুদ্দীন মণ্ডলের নেতৃত্বে ছাত্র-যুবকদের সমন্বয়ে একটি বাহিনী গড়ে ওঠে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা গোলাম নবী সাটুর নেতৃত্বে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে অপর একটি বাহিনীর সৃষ্টি হয়েছিল।
১৯শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখল করে। ১০৬টি আর্মি জিপ আর্টিলারি বহরসহ হানাদার বাহিনীর বিশাল কনভয় শহরে অনুপ্রবেশ করে। তারা শহরের পিডব্লিউডি ডাকবাংলো, ট্রেজারি অফিস, নিউ মার্কেট ও পুরাতন জেলখানায় ক্যাম্প স্থাপন করে। শহরে অবস্থান নিয়ে তারা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। অনেক বাড়ি ও দোকান জ্বালিয়ে দেয়। নিরীহ মানুষ ভয়ে শহর থেকে পালাতে থাকে। হানাদার বাহিনীর এসব কাজে নেতৃত্ব দেয় পাকবাহিনীর মেজর শেরওয়ানি, মেজর রিজভি, ইপিআর বাহিনীর মেজর ইসহাক ইউনুস ও ক্যাপ্টেন ইকবাল এবং পাঞ্জাবি পুলিশ অফিসার চিমা খান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে শান্তি কমিটি রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর পাশাপাশি ‘পাকগার্ড’ নামে আলাদা একটি বাহিনী গড়ে তোলা হয়। যাদের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গড়ে ওঠে তারা হলো— মো. লতিফ হোসেন (সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী), এডভোকেট তৈয়ব আলী (সম্পাদক, জামায়াতে ইসলামীর আমির), রমজান আলী (কোষাধ্যক্ষ, ব্যবসায়ী), শের খান, মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ ও গোলাম রসুল। শান্তি কমিটির সভাপতি লতিফ হোসেনের ঝিলিম রোডস্থ বাসায় এ কমিটির কার্যালয় ছিল। রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় হুজরাপুরের আবুল কালাম আজাদ। রুকু মিয়ার বাসা দখল করে রাজাকার বাহিনীর অফিস করা হয়। বাসুনিয়াপট্টির গোলাম কবিরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে আলবদর বাহিনী। কাঁঠাল বাগিচার বিশিষ্ট আইনজীবী রণজিৎ কুমার বাগচীর বাড়ি দখল করে আলবদর বাহিনীর কার্যালয় করা হয়। ভবানীপুরের মোজাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে আলশামস বাহিনী গড়ে ওঠে। মুনীর চৌধুরী মনি নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে গড়ে ওঠে পাকগার্ড নামে একটি বিশেষ বাহিনী। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করা ছিল এদের উদ্দেশ্য। বড় ইন্দারা মোড়ের বিশ্বনাথ রায়ের বাড়িটিকে তারা পাকগার্ডের কার্যালয় ও ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে পাকবাহিনীর অন্যতম সহযোগী মাওলানা আবদুল মান্নান ওরফে বনবাসী মান্নান অত্যন্ত ভয়ঙ্কর প্রকৃতির ছিল। এছাড়া শাহজাহান আলী ওরফে শাহজাহান ফকির, গোলাম জাকারিয়া ওরফে তেনু ডাক্তার প্রমুখ তাদের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আনসার কমান্ডার রুহুল আমিন ওরফে রুহুল কমান্ডার (আজাইপুর) ছিল পাকবাহিনীর অন্যতম প্রধান সহায়তাকারী আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের অধিকাংশ ছিল বিহারি ও ইসলামি ছাত্র সংঘ-এর কর্মী। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড ক্ষতির কারণ ছিল। তাদের প্ররোচনায় পাকবাহিনী বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালাত। তারা নিরীহ গ্রামবাসীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করত। পোড়াগ্রাম, দশরসিয়া ও তেররসিয়া গ্রামের অনেক মানুষ তাদের কারণে গণহত্যার শিকার হয় ৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জের দালালেরা বিভিন্ন স্থান মুক্তিযোদ্ধাদের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছাত্র-যুবকদের অবস্থানগত তথ্যাদি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সরবরাহ করত। এসব তথ্যের ভিত্তিতে পাকহানাদাররা যুবকদের ধরে এনে নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খবর আদায়ের চেষ্টা চালাত। কাঙ্ক্ষিত তথ্য দিতে অস্বীকার করলে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করত। শুধু শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার নয়, লুটপাট ও নারীধর্ষণেও এরা পাকবাহিনীর সহায়ক ছিল।
১৯শে এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখল করার পরপর পাক হানাদারবাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের নাম, পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহ করে। পরে তাঁদের বাড়িতে হানা দিয়ে হত্যাকাণ্ড ও নানা নির্যাতন চালায়।
২০শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদাররা শহরের বেশকিছু বাড়ি ও দোকান লুট ও ভাংচুর করে। লুটপাটের পর তারা কিছু বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পাকবাহিনী এদিন ইসলামপুর মহল্লার বিশিষ্ট চিকিৎসক আলহাজ ডা. মমতাজ হোসেন, তাঁর দুই কন্যা মাহবুবা খাতুন লীনা ও মাজতুরা খাতুন হ্যাপি এবং হায়দার আলী নামে একজন মেডিক্যাল প্রতিনিধিকে হত্যা করে।
২৯শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদাররা শহরের রামকৃষ্টপুরের ধনাঢ্য ব্যক্তি সেরাজউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি একজন বাঙালি পুলিশকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর বাড়িতে ঐ পুলিশের পোশাক পাওয়া গিয়েছিল বলে তাঁকে হত্যা করা হয়।
৩০শে এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা টেলিফোন অপারেটর আবদুল জলিলকে নবাবগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। নবাবগঞ্জ কৃষি ব্যাংকের ড্রাইভার হাসিমকে তারা পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে। তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তিনি ২৭শে মার্চ থেকে ১৯শে মে পর্যন্ত সংগ্রাম কমিটির যোদ্ধাদের খাবার পরিবহনে জিপ চালিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। এভাবে তারা নবাবগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা উপাধ্যক্ষ মনিমুল হক, রাজারামপুরের এহসান আলী মাস্টার, মসজিদপাড়ার এবুল, ফকিরপাড়ার জাহাঙ্গীরসহ অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। শহীদ বুদ্ধিজীবী মনিমুল হকের ওপর নির্যাতন ও তাঁর হত্যাকাণ্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের একটি বহুল আলোচিত ও বেদনার্ত ঘটনা। বিভিন্ন স্থান থেকে অনেককে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে নবাবগঞ্জ ইপিআর ক্যাম্প, শ্মশানঘাট আর রেহাইচরে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। তাদের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
পাকবাহিনীর অত্যাচারের স্থান ছিল তৎকালীন ট্রেজারি অফিস (বর্তমান এজি অফিস)। যাকে তাদের সন্দেহ হয়েছে এবং দালালরা যাদের চিহ্নিত করেছে, তাদেরই ধরে নিয়ে এসে এখানে নির্যাতন করা হতো। পায়ুপথে রোলার ঢুকানো, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সূচ ফোটানো, নাকে-মুখে গরম পানি ঢালা ইত্যাদি অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
২রা মে সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা তীরবর্তী নামোটিকরামপুর গ্রামে পাকবাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। কুখ্যাত দালাল মো. বেলাল আলী তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। মুক্তিবাহিনীকে আশ্রয় দেয়ায় তারা মো. কশিমুদ্দীনের বাড়িতে আক্রমণ চালায় এবং তাঁর ছেলে এনামুল (একরাম)-কে গুলি করে হত্যা করে। ভাইয়ের এ পরিণতি দেখে হায়দার আলী হদুল ও আবুল ওহাব পালাতে গেলে তাদের পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে। একই গ্রামের মো. সাজ্জাদ আলি (পিতা তামশুরুদ্দীন মণ্ডল), মো. ইজ্জত বিশ্বাস (পিতা মোহসিন বিশ্বাস), মো. সামজাদ বিশ্বাস, মো. সলেমান আলি (পিতা মো. দাওদ আলি), মো. আইবর বিশ্বাস (পিতা মো. রিয়াজ বিশ্বাস) ও মো. সোহরাব বিশ্বাস (পিতা মো. নেফাতুল্লাহ বিশ্বাস)-কে পাকসেনারা পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়।
৩রা মে পাকবাহিনী টিকরামপুর গ্রামে আক্রমণ চালায়। সেখানে তারা নেক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। নামোটিকরামপুর গ্রামের দালাল বেলালের পুত্র হোদা ছিল এ তাণ্ডবের মূল হোতা। তারা রেহাইচরের আবদুল গণির ছেলে বদু মাস্টার ও তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করে। লাশদুটি ভেতরে রেখে তারা ঘর জ্বালিয়ে দেয়।
১৬ই জুন পাকসেনা ও রাজাকাররা আজাইপুরের মো. আল ইমরানকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে বিভিন্ন বয়সের ৩০-৪০ জন লোক বন্দি ছিল। পাকসেনারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মোটা বেতের লাঠি দিয়ে সবাইকে নির্মমভাবে প্রহার করে। অনেকের হাত-পা ভেঙে যায়। নির্যাতন শেষে তারা সবাইকে জেলখানায় নিয়ে যায়। রাত প্রায় ১২টার পর তারা সবাইকে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে উঠায় এবং গুজরঘাটের শ্মশানে নিয়ে যায়। সেখানে সবাইকে লাইন করে দাঁড় করায়। তারপর লাইনের ভেতর থেকে ১২ জনকে বেছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। অন্যদের জেলখানায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং সকালে মেজর শেরওয়ানির সামনে হাজির করে। বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের বেদম প্রহার করা হয়। সেদিন রাতে হানাদাররা ৭ জনকে শ্মশানঘাটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এভাবে তিনদিনে প্রায় ৪০-৪৫ জনকে পাকবাহিনী হত্যা করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্মশানঘাট গণহত্যা – এ জেলায় হত্যাকাণ্ডের এক বিভীষিকাময় অধ্যায়।
১৮ই জুন রাতে জেলখানায় হানাদাররা দুজন নারীকে ধরে নিয়ে এসে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখে। তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর পাকিস্তানি মেজরসহ কয়েকজন সেনা এ দুই নারীকে নিয়ে বাইরে চলে যায়। এরপর তাদের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
৪ঠা জুলাই রাত ৪টার দিকে থানার দারোগা মোখলেছুর রহমান, রুহুল আমিন, আফজালুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, আব্দুস সাত্তার, মো. গাজোলী, মসজিদপাড়ার শিশ মোহাম্মদ ও শহরের আকিমুদ্দীনসহ ২৫-৩০ জন রাজাকার শংকরবাটি বটতলা হাটে গিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালায়। তারা বেশ কয়েকজনকে আটক করে। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন— মো. লোকমান আলী (পিতা হাজী আব্দুর রশিদ), তাইনুস মণ্ডল (পিতা মো. মাজিদুল্লাহ), আব্দুস সাত্তার (পিতা আফসার আলী), নোমান আলী (পিতা মোবারক মুন্সি), আব্দুর রোউফ রফিক (পিতা একতার আলী মেকার), মো. টিপু (পিতা শেখ মনতাজ আলী) ও তৈয়ব আলী (পিতা মির্জা মাহতাব আলী)। তারা হাজী আব্দুর রশিদ (পিতা মো. রহমান মোন্না) ও হাজী সাজ্জাদ আলী (পিতা ওমর মণ্ডল) নামে দুজন প্রবীণ ব্যক্তিকেও আটক করে। আটককৃতদের তারা থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মেজর শেরওয়ানি, মেজর ইউনুস, সুবেদার ফিরোজ আহম্মেদ, নায়েক মদোদখান, সুবেদার রহমান খান ও মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান লতিফ হোসেন (লতিফ মিনিস্টার) উপস্থিত ছিল। তারা প্রত্যেককে ভিন্ন-ভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চায়। এক পর্যায়ে লতিফ হোসেন আটককৃতরা আওয়ামী লীগের সাহায্যকারী ও তাদের আত্মীয়-স্বজন আওয়ামী লীগের কর্মী বলে তাদের গালিগালাজ করে। পরে সবাইকে থানা থেকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিকেলে আবার থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর হাজী আব্দুর রশিদ ও হাজী সাজ্জাদ আলীকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদের আবারো জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়। পরদিন বিকেলে লোকমান আলী, নোমান আলী, আব্দুর রোউফ রফিক ও আব্দুর রহমান মন্টুকে জেলখানা থেকে চোখবাঁধা অবস্থায় গাড়িতে তুলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে হানাদাররা নানাভাবে নির্যাতন করে। রাত ১২টায় তাদের বাইরে নিয়ে বেয়নেট চার্জ করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
৩রা আগস্ট রাতে পাঞ্জাব পুলিশের অফিসার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার বাহিনীর প্রধান ও শান্তি কমিটির সদস্যরা শহরের ইসলামপুর নিবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক পাকিস্তান-এর সংবাদদাতা ডি এম তালেবান নবীর বাড়ি ঘোরাও করে সমস্ত বাড়ি তছনছ এবং তাঁকে গ্রেফতার করে।
তারা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগে ব্যবহৃত ওয়ারলেস ও রিভলভার কোথায় তা জানতে চায়। সদুত্তর না পেয়ে নবীকে তারা পা ফাঁক করে দুহাত ওপরে তুলিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। হাত যেন ঝুলে না পড়ে সেজন্য তাঁর হাতের ওপর দিকের ঘাড়ের ওপর একটি বাঁশ দেয়। এরপর চাবুক দিয়ে তাঁর শরীরে বেদম প্রহার করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের তরুণ সংস্কৃতি কর্মী মোহ, শাহ আলম পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস পালন করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন। ৩রা আগস্ট পাকহানাদার বাহিনীর একটি দল তাদের বাড়ি ঘেরাও করে তাকে আটক করে। আটকের পর তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়।
৪ঠা আগস্ট রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রায় ৫০ জন শান্তি কমিটির সদস্য ও পুলিশ শহরের মাঝপাড়ার মোহাম্মদ মোছাওয়ার হোসেনের বাড়ি ঘেরাও করে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে।
১০ই অক্টোবর পাকহানাদার বাহিনী ইসলামপুর ইউনিয়নের পোড়াগ্রাম, দশরসিয়া ও তেররসিয়া গ্রামে এক নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। এদিন পোড়াগ্রাম গণহত্যা, দশরসিয়া গণহত্যা ও তেররসিয়া গণহত্যায় এ তিন গ্রামের প্রায় ২০০ শত লোক প্রাণ হারান।
শহরের পিডব্লিউডি (সিএন্ডবি) ডাকবাংলো, ট্রেজারি ভবন, নিউ মার্কেট, রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়, পুরাতন জেলখানা ইত্যাদি জায়গায় পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির ছিল।
<ইপিআর ক্যাম্প বধ্যভূমি ও গণকবর- নামে মহানন্দা নদীর তীরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে একটি বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে। রেহাইচরে আছে একটি বধ্যভূমি ও গণকবর। এছাড়া রয়েছে শ্মশানঘাট বধ্যভূমি – এবং বারোঘরিয়া (ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বটগাছের নিচে) গণকবর।
এপ্রিল মাসের শেষদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা স্বল্প অস্ত্র ও গোলা-বারুদ নিয়ে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের ওপর সীমিত আক্রমণ শুরু করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ও তার আশপাশের এলাকায় ১৫-১৬ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গেরিলা দল মাঝে-মধ্যেই আক্রমণ করে শত্রুদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখত।
১৪ই আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা হরিপুর পুল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ও আমনুরার পাকসেনাদের অবস্থানে ত্রিমুখী আক্রমণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা আক্রমণ নামে পরিচিত এ-যুদ্ধ উত্তরবঙ্গের মুক্তিযুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এখানে ২ জন পাকসেনা নিহত, কয়েকজন আহত ও অনেকে বন্দি হয়। এ-যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ১ জন আহত হন। এ-যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের আটক করা ও সাধারণ মানুষের ওপর পাকবাহিনীর নির্যাতন আরো বৃদ্ধি পায়৷
হরিপুর পুল যুদ্ধ – সংঘটিত হয় দুবার – ১৪ই আগস্ট ও ১৩ই ডিসেম্বর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানার অদূরে অবস্থিত ছিল হরিপুর পুল। এখানে ও এর সন্নিকটে এ দুবার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম যুদ্ধে ২ জন পাকসেনা নিহত, একজন আহত ও ১১ জন বন্দি হয় এবং ২ জন পালিয়ে যায়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও একজন আহত হন। দ্বিতীয় যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৯ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। পাকসোদেরও কয়েকজন হতাহত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগডাঙ্গা ছিল মুক্ত এলাকা। এর চারদিকে গেরিলা যোদ্ধারা সার্বক্ষণিক প্রহরায় নিয়োজিত থাকতেন। রাজাকার ও আলবদরদের একটি যৌথ দল কর্তৃক সুন্দরপুর ও বৈদ্যনাথপুর গ্রামের লোকজনের ওপর অত্যাচার চালানোর খবর পেয়ে গেরিলা যোদ্ধাদের একটি শক্তিশালী দল আবদুস সামাদের নেতৃত্বে গ্রামদুটি ঘিরে ফেলে। কিন্তু ততক্ষণে রাজাকাররা পালিয়ে যায়। পরের দিন বিকেলে ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের সমন্বয়ে গঠিত একটি যোদ্ধাদল হাবিলদার সানাউল্লাহর নেতৃত্বে মিরেরচরের দিকে রওনা হয়। শত্রুরা সংখ্যায় ছিল শতাধিক এবং তারা সুরক্ষিত বাংকারে অবস্থান করছিল। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় ছিলেন মাত্র ৪০ জন আর তাঁদের কাছে মাত্র একটি দুই ইঞ্চি মর্টার, তিনটি এলএমজি, এসএলআর ও রাইফেল ছিল। এ সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে শত্রুদের আক্রমণ করেন। দুপক্ষের মধ্যে আধঘণ্টা যুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে পাকসেনারা বাংকার ছেড়ে পেছনের গ্রামে গিয়ে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকলে হঠাৎ দলনেতা হাবিলদার সানাউল্লাহ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। দলনেতা আহত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা বাগডাঙ্গায় ফিরে যেতে বাধ্য হন।
মিরেরচরের অভিযান সফল না হওয়ায় চর বাগডাঙ্গায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা যখন ক্ষুব্ধ ও ভারাক্রান্ত, ঠিক তখন পেট্রোলে গিয়ে রাজাকারদের গুলিতে ইসমাইল ও আবুল হোসেন নামে দুজন গেরিলা যোদ্ধা আহত হন। তবে এ পেট্রোল দল দুজন রাজাকারকে ধরে আনতে সক্ষম হয়। পরের দিন ইসলামপুরস্থ পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ইসলামপুর পাকঘাঁটি আক্রমণ ব্যর্থ হয়। এখানে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
১০ই ডিসেম্বর সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে চরবাগডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের জন্য অগ্রসর হন। প্রায় ১০ মাইল পথ হেঁটে তাঁরা পোড়াগ্রামের পাশে মহানন্দা নদীর তীরে সাহেবের ঘাট নামক স্থানে পৌঁছেন। ঘাটের অপর পাড়ে নামোশংকরবাটী গ্রাম। সেখানে পাকসেনাদের কোনো অবস্থান আছে কি-না তা জানার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি-র ফায়ার করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা এক মাইল পশ্চিমে মোহনপুর ঘাটে যান। মোহনপুরের বিপরীত দিকে নদীর অপর পাড়ে চরমোহনপুরে পাকসেনাদের ঘাঁটি ছিল। দুপুর পর্যন্ত মোহনপুরে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধারা নদী পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দলনেতা সুবেদার ইসমাইলের কভারিং-এর মধ্যে নিরাপদে নদী পার হয়ে তাঁরা পজিশন গ্রহণ করেন। এখান থেকে কোয়ার্টার। মাইল দূরে পারমোহনপুর গ্রামে পাকসেনাদের বাংকার ছিল।
মুক্তিযোদ্ধারা এ বাংকার লক্ষ করে গুলি করেন। দুই ইঞ্চি মর্টার থেকে শেলিং করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ভীত হয়ে শত্রুরা বাংকার ছেড়ে পেছনে সরে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত অগ্রসর হয়ে বাংকার দখল করেন। এখানে দুজন রাজাকার ও ইপিকাফ সদস্য ধরা পড়ে। বাকিরা পালিয়ে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা টিকরামপুর গ্রামে অবস্থান নেন।
টিকরামপুর গ্রামে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধারা ১২ই ডিসেম্বর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মধ্যে পাকসেনাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পাকসেনাদের সরবরাহ লাইন বন্ধ করার জন্য এটা প্রয়োজনীয় ছিল। উল্লেখ্য, এর আগে ১৪ই আগস্ট হরিপুর পুল ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই পাকসেনারা কাঠ দিয়ে পুলটি নতুনভাবে নির্মাণ করে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করে। ১২ই ডিসেম্বর ৫টায় মুক্তিযোদ্ধারা রাজারামপুর এসে পৌঁছলে হঠাৎ তাঁদের ওপর পাকসেনাদের মর্টারের গোলা পড়তে শুরু করে। গোলার আঘাতে পার্শ্ববর্তী হাসিনা গার্লস স্কুল ভবনের একাংশ ধ্বসে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত পজিশন গ্রহণ করেন। পাকসেনারা তখন দুমাইল দূরের শিয়ালা কলোনি ক্যাম্প থেকে শেলিং করছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে বটতলা হাট বরাবর পাকসেনাদের দুটি লরি আসে। লরিগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের রেঞ্জের মধ্যে আসামাত্র দলনেতার ইঙ্গিতে তাঁরা লরির চাকা লক্ষ করে এলএমজি-র গুলিবর্ষণ করেন। দুটি লরির চাকা গুলির আঘাতে বিস্ফোরিত হলে ড্রাইভার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ফলে বেশকিছু পাকসেনা আহত হয়। তারা দ্রুত পজিশন নিয়ে ফায়ার শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা জবাব দিলে দুপক্ষের মধ্যে মুখোমুখি টানা তিন ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। ভারী অস্ত্র না থাকায় সুবেদার ইসমাইলের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন।
১৩ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চাপাইনবাবগঞ্জ শহরের অনতিদূরে অবস্থিত হরিপুর পুলের কাছে ও মহানন্দা নদীর উপকণ্ঠে পাকহানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এটি ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। এ-যুদ্ধে ইপিআর- এর নায়েক মোহাম্মদ নবীর উদ্দীন বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে-করতে শহীদ হন। ১৩ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শুরু হওয়া যুদ্ধে রাতের এক পর্যায়ে (১৪ই ডিসেম্বর) ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর শহীদ হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত হওয়ার যুদ্ধ নামে খ্যাত এ-যুদ্ধে ৯ জন গ্রামবাসীও শহীদ হন। অপরদিকে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়। এ- যুদ্ধের পর ১৫ই ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন— মোহর আলী, বীর বিক্রম- (পিতা সোলেমান মণ্ডল, নয়নসুখা, নামুশংকরবাটি)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মোহর আলী, বীর বিক্রম (ইসলামপুর পাকিস্তানি ঘাঁটিতে আক্রমণে শহীদ), শামসুল হক (পিতা আমজাদ আলী পাইকার, কৃষ্ণগোবিন্দপুর), এনতাজ আলী (পিতা এমাজউদ্দীন, অনুপনগর), নজরুল ইসলাম (পিতা রিয়াজ উদ্দীন, রামকৃষ্টপুর), মাইনুল হক (পিতা মীর ওয়াসেক আলী, ইসলামপুর), সাইদুর রহমান (পিতা আলতাফ হোসেন, সুন্দরপুর), নবুয়াত আলী (পিতা শওকত, আজাইপুর), আ. হাই (পিতা ওদুদ মিয়া, হরিপুর, চৌহদ্দীটোলা), আমিনুল হক (পিতা আকিমুদ্দিন মোল্লা, বালিয়াডাঙ্গা), আলতাফ হোসেন, (পিতা আলতাফ উদ্দীন, বালিয়াডাঙ্গা), শাহজালাল (পিতা মো. দাউদ হোসেন, আরামবাগ), এমদাদুল হক (পিতা মো. সিদ্দিক মণ্ডল, বালিয়াডাঙ্গা), আশরাফুল হক (পিতা ইদ্রিশ আলী, অনুপনগর), শরিফুল ইসলাম (পিতা মো. আলী মোল্লা, বালিয়াডাঙ্গা), গোলাম মোস্তফা (পিতা তামিজউদ্দীন, বাগডাঙ্গা), মোস্তাফিজুর রহমান (নামোশংকরবাটি) এবং গোলাম নবী সাটু (পিতা সাইদুর রহমান, ঝিলিমরোড)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিফলক ও স্মৃতিস্মারক নির্মিত হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সেতু ও সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন, —চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ স্মৃতিস্তম্ভ-, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্মৃতিফলক (শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাসহ), বারোঘরিয়া ব্রিজ চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক (শিল্পী মৃণাল হক), বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু), বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজ (স্বরূপনগর), শহীদ মোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয় (স্বরূপনগর), শহীদ মনিমুল হক সড়ক (আওয়ামী লীগ অফিস থেকে হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত), ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক সড়ক (হাসপাতাল রোড), বীর মুক্তিযোদ্ধা রোজিউর রহমান বিশু সড়ক (বড় ইন্দারা মোড়), মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবুল ফজল খাঁ ফজু মিয়া সড়ক (হরিমোহন স্কুল থেকে নিমতলা পর্যন্ত), উপজেলা চত্বরের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, শহীদ সাটু হল, ইপিআর স্মৃতিসৌধ- ‘যাদের রক্তে মুক্ত এ দেশ, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর মুক্তমঞ্চ (পৌরসভা প্রাঙ্গণ), ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর স্মৃতি সংঘ (রেহাইচর), শহীদ জাহাঙ্গীর সড়ক, আবদুল মান্নান সেন্টু মার্কেট (নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে) এবং শহীদ মনিমুল হক ভবন (নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ)। [মাযহারুল ইসলাম তরু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড