You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.30 | চরমটুয়া খাদ্য গুদাম রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (নোয়াখালী সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

চরমটুয়া খাদ্য গুদাম রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (নোয়াখালী সদর)

চরমটুয়া খাদ্য গুদাম রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (নোয়াখালী সদর) পরিচালিত হয় ৩০শে অক্টোবর। এতে ২৬ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে এবং পরে তাদের হত্যা করা হয়।
নোয়াখালী সদর উপজেলার সুধারাম থানার ১নং চরমটুয়া ইউনিয়নের উদয় সাধুরহাট স্থানীয়ভাবে ওদার হাট নামে পরিচিত। এখানেই চরমটুয়া খাদ্য গুদাম অবস্থিত। বর্তমানে এটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি মিলিশিয়া – বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকাররা এ খাদ্য গুদামে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্প থেকেই তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করত এবং সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার- নির্যাতন চালাত। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প অপারেশনের পরিকল্পনা করেন।
৩০শে অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে নোয়াখালী অঞ্চলের সি জোনের মুক্তিযোদ্ধারা চরমটুয়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। হাবিলদার সিরাজ, হাবিলদার মতিন ও হাবিলদার খালেক-এর গ্রুপসহ ৪০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা এ অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা স্থায়ী এ-যুদ্ধে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এক পর্যায়ে একদল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা কৌশলে ক্যাম্পের ভবনের দেয়ালের কাছে পৌঁছে গ্রেনেড নিক্ষেপের হুমকি প্রদান করলে ক্যাম্পে অবস্থানরত ২৬ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করতে সম্মত হয়। একই সঙ্গে দুপুর ২টার পর নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পের চারদিকে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে, যা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যোগায়। সেদিন স্থানীয় জনসাধারণকে একত্রিত হতে উদ্বুদ্ধকরণে ভূমিকা রাখেন শামছুল কবির চৌধুরী (রাজনৈতিক উপদেষ্টা, জোন সি), ফজলে আলম ভূঞা, আফাজ উদ্দিন চৌধুরী জাফর, আকবর হোসেন ভূঞা সেলিম প্রমুখ। পরবর্তীতে বন্দিকৃত ২৬ জন রাজাকারকে আবদুল্লা মিয়ার বাড়ির সামনে তিন রাস্তার মোড়ে পুলের নিকট এনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ খবর মাইজদী পিটিআইতে অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে পৌঁছলে পরদিন সকাল ১০টার দিকে পাকহানাদার বাহিনী বিরাট বহর নিয়ে সেখানে পৌঁছে। পাকবাহিনীর মেজর গাড়ি থেকে নেমে রাজাকারদের ক্ষত- বিক্ষত মৃতদেহ দেখে ভীত-সন্ত্রন্ত হয়ে পাল্টা অপারেশন না চালিয়ে দ্রুত মাইজদীতে ফিরে যায়। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড